Site icon

যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হয় এবং এর আদ্যোপান্ত।

যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হয় এবং এর আদ্যোপান্ত।

যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হয় এবং এর আদ্যোপান্ত।

যুক্তফ্রন্ট গঠনের প্রেক্ষাপটঃ

১৯৪৭ সালে বৃটিশ ভারতকে দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়। ফলে দুটি স্বাধীন রাষ্ট্র ভারত ও পাকিস্তানের জন্ম হয়। লাহোর প্রস্তাবের ভিত্তিতে ( ১৯৪০ সালের ২৩ শে মার্চ লাহোরে মুসলিম লীগের এক অধিবেশনে মুহাম্মাদ আলী জিন্নাহর সভাপতিত্বে ভারতীয় উপমহাদেশে বসবাসকারী মুসলিমদের পৃথক রাষ্ট্রের দাবি জানিয়ে তৎকালীন পূর্ব বাংলার মুখ্যমন্ত্রী আবুল কাশেম ফজলুল হক ঘোষণা করেন যে, “ভারতের উত্তর পশ্চিম ও পূর্বাঞ্চলে যে সব অঞ্চল মুসলিম সংখ্যাগরিষ্ঠ সে সব অঞ্চলে পৃথক স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা করতে হবে”।) ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান এবং ১৫ই আগস্ট ভারত দুটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। বাঙালি মুসলিমগন মনে করেছিল তাদের আশা-আকাঙ্খা এবার পূরন হতে চলেছে। 

কিন্তু পশ্চিম পাকিস্তানের শাসকগোষ্ঠীর পূর্ব পাকিস্তানের প্রতি অথনৈতিক বৈষম্য, পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতাদের অবদমনের ফলে বাংলায় রাজনৈতিক অসন্তোষ তীব্রতর হয়। জাতীয় সিদ্ধান্তগ্রহনে বাঙালিরা উপেক্ষিত হওয়ায় আঞ্চলিক রাজনীতিবিদগন একতাবদ্ধ হতে শুরু করে। অবশেষে পশ্চিম পাকিস্তানের কেন্দ্রীয় সরকারের বিরুদ্ধে পূর্ব বাংলার রাজনীতিবিদগন রাজনৈতিক জোট গঠন করে। 

যুক্তফ্রন্ট গঠনঃ

১৯৫১ সালে পূর্ব বাংলার সাধারন আইনসভার নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিল। ক্ষমতালোভী মুসলীম লীগ সরকার তা কয়েক ধাপে পিছিয়ে দেয়। পূর্ব বাংলার রাজনীতিবিদগন মুসলিম লীগের ক্ষমতালিপ্সু অভিসন্ধি বুঝতে পারে। পূর্ব বাংলার জনগনের আশা আকাঙ্খা পূরনের লক্ষে ১৯৫৩ সালে পূর্ব বাংলার রাজনীতিবিদগন যুক্তফ্রন্ট নামে এক নতুন রাজনৈতিক জোট গঠন করেন। ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। 

যুক্তফ্রন্টের রাজনৈতিক দলসমূহঃ 

৪টি বিরোধী ধারার রাজনৈতিক দল নিয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয় যা পূর্ব বাংলার রাজনীতিতে এক নতুন দিগন্তের সূচনা হয়। মাওলানা ভাসানির নেতৃত্বে আওয়ামী মুসলিম লীগ, শেরে বাংলা একে ফজলুল হকের নেতৃত্বে কৃষক শ্রমিক পার্টি, হাজী মোহাম্মদ দানেশ ও মাহমুদ আলী সিলেটির নেতৃত্বে  গণতান্ত্রিক দল ও মাওলানা আতাহার আলীর নেতৃত্বে নেজামে ইসলামী এর সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়। ১৯৫৩ সালে যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা দাবি কর্মসূচী প্রণয়ন করে এবং দাবী গুলোকে নির্বাচনী ইশতেহারে অন্তর্ভূক্ত করে। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনী প্রতীক ছিল “নৌকা” যা পূর্ব বাংলার জনসাধারনের কাছে ব্যাপক জনপ্রিয়তা পায়।

যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহারঃ

আরও পড়ুন:

যুক্তফ্রন্ট কেন গঠিত হয়েছিল

মুক্তিযুদ্ধে জর্জ হ্যারিসনের অবদান।

মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থীরা কোথায় এবং কিভাবে আশ্রয় পেয়েছিল।

 মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের ভূমিকা বিস্তারিত।

১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা বিশিষ্ট নির্বাচনী ইশতেহার প্রচার করে। 

দফা  দফার বিবরন
বাংলাকে পাকিস্তানের অন্যতম রাষ্ট্র করা হবে। 
জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ করে উদ্বৃত্ত জমি ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে বিতরণ করা হবে। 
মুসলিম লীগ শাসনামলে পাট কেলেঙ্কারির সুষ্ঠু তদন এবং বিচার করতে হবে এবং পাট ব্যবসাকে জাতীয়করন করে পূর্ববঙ্গ সরকারের অধীনস্ত করা হবে।
কৃষিতে সমবায় প্রথা প্রবর্তন এবং কুটির শিল্পের উন্নয়নে সরকারি সাহায্যের ব্যবস্থা করা।
পূর্ববঙ্গকে লবন শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা হবে। 
কারিগর শ্রেনির কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা হবে।
খাল খনন করে দেশে বন্যা রোধ করা হবে এবং সেচ ব্যবস্থার সংস্কার করে দূর্ভিক্ষ রোধ করা হবে।
দেশের উন্নয়নের জন্য ‍কৃষি ও শিল্প খাতের আধনিকীকরন করা হবে।শ্রমিকদের বেতন মান বাড়ানো হবে।
অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রবর্তন এবং শিক্ষকদের বেতন বৃদ্ধি করা হবে।
১০ শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করা হবে
১১ ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়াশীল আইনগুলো বাতিল করে উচ্চ শিক্ষার পথ সুগম করা হবে।
১২ শাসনব্যয় হ্রাস করা হবে। কোন মন্ত্রীর বেতন এক হাজার টাকার অধিক হবে না। 
১৩ দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা হবে।
১৪ নাগরিকের জন্য ক্ষতিকর ও প্রতিক্রিয়াশীল আইন বাতিল করা হবে এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে।
১৫ স্বাধীন বিচারবিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হবে।
১৬ বর্ধমান হাউসকে বাংলা একাডেমি করা হবে।
১৭ ভাষা আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং শহীদ মিনার নির্মান করা হবে।
১৮ একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস এবং সরকারি ছুটির দিন ঘোষনা করা হবে।
১৯ পূর্ব বাংলার স্বায়ত্তশাসন এবং প্রতিরক্ষ, পররাষ্ট্র ও মুদ্রানীতি বাদে অন্য সকল বিষয় পূর্ববঙ্গের সরকারের হাতে ন্যস্ত থাকবে। 
২০ যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভার মেয়াদ শেষ হওয়ার ছয় মাস পূর্বে মন্ত্রীসভা পদত্যাগ করবে এবং স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে।
২১ কোন আসন শূন্য হলে তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করা হবে। 

 

যুক্তফ্রন্টের নির্বাচনঃ

২১ দফার ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনের প্রচারাভিযান পরিচালনা করেন এবং এর নেতৃত্বে ছিলেন মাওলানা আব্দুল হামিদ খান ভাসানি, হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী এবং শেরে বাংলা একে ফজলুল হক। 

১৯৫৪ সালে অনুষ্ঠিত যুক্তরাষ্ট্র প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে প্রধান প্রতিদ্বন্দী দুটি রাজনৈতিক দল যুক্তফ্রন্ট ও মুসলিম লীগ। পূর্ব পাকিস্তান প্রাদেশিক পরিষদের সর্বমোট ৩০৯ টি আসনের মধ্যে যুক্তফ্রন্ট ২২৩ টি আসনে জয়লাভ করে একক সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করে। অন্যদিকে ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ পেয়েছিল মাত্র ১০টি আসন। 

যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রীসভাঃ

যুক্তফ্রন্ট সরকারের মুখ্যমন্ত্রী হন শেরে বাংলা একে ফজলুল হক। মুখ্যমন্ত্রীসহ আরো মোট ১২ জন সদস্য নিয়ে যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভা গঠিত হয়। ৩ এপ্রিল ১৯৫৪ সালে মুখ্যমন্ত্রী সহ কৃষক শ্রমিক পার্টির আবু হোসেন সরকার ও সৈয়দ আজিজুল হক নান্না মিয়া এবং নেজামে ইসলামি পার্টির চৌধুরী শপথ নেন। পরবর্তীতে ১৫ই মে আওয়ামী মুসলীম লীগ হতে আতাউর রহমান খান, আবুল মনসুর আহমদ, আব্দুস সালাম খান, হাশিম উদ্দিন আহমদ, কফিলউদ্দিন চৌধুরী এবং শেখ মুজিবুর রহমনা যুক্তফ্রন্ট মন্ত্রিসভার অন্তর্ভূক্ত হন। আদমজীতে দাঙ্গা, পূববাংলাকে স্বাধীন করা হবে প্রভৃতি রাজনৈতিক দ্বন্দের কারনে ২৯ মে যুক্তফ্রন্ট সরকার ভেঙ্গে দিয়ে পূর্ববঙ্গে ১৯৩৫ এর ভারত শাসন জারি করা হয় এবং মেজর জেনারেল ইস্কান্দার মির্জাকে গর্ভনর করা হয়। 

যুক্তফ্রন্টের মাধ্যমে বাঙালী জাতীয়তাবাদের আন্দোলন সামনে আরো একধাপ অগ্রসর হয়েছিল।

আরও পড়ুন:

সাইবার অপরাধ গুলো কি কি

৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম।

মুজিবনগর সরকারের সদস্য ছিলেন কে কে এ সম্পর্কে বিস্তারিত।

অপারেশন সার্চলাইট এর নীল নকশা কে তৈরি করেন। অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত।

অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কীভাবে ছড়িয়েছিল।

সাইমন ড্রিং এর পরিচয়।

মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কয়টি ও কি কি

Exit mobile version