প্রিয় দর্শক, সাাইমন ড্রিং এর পরিচয় সংক্রান্ত আর্টিকেলে আপনাকে স্বাগতম। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
সাইমন ড্রিং এর পরিচয়ঃ
সাইমন ড্রিং ১৯৪৫ সালে ইংল্যান্ডে ফাকেনহাম, নরফোকে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি একাধারে একজন সাংবাদিক, টিভি উপস্থাপক ও প্রামাণ্যচিত্র নির্মাতা। তাকে নিরপেক্ষ ও বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার জনক বলা হয়। তিনি কাজ করেছেন একাধারে রয়টার্স, দ্যা ডেইলি টেলিগ্রাফ, ও বিবিসেতে। সাংবাদিকতার জন্য ভারত উপমহাদেশ, পূর্ব এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ, মধ্যপ্রাচ্য ও ল্যাটিন আমেরিকায় দীর্ঘ সময় অতিবাহিত করেন। বিশ্বের চাঞ্চল্যকর তরতাজা খবর নিয়ে হাজির হতেন। কর্মজীবনে প্রায় ২২টি যুদ্ধের খবর সংবাদে পরিণত করেছেন। কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ বর্ষসেরা সাংবাদিক, ভ্যালিয়ান্ট ফর ট্রুথ সহ আরো অনেক আন্তর্জাতিক পুরস্কার ও পদকে ভূষিত হয়েছেন। ভিয়েতনাম যুদ্ধ, বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধের খবর প্রকাশের কারনে বিশ্বে তিনি সর্বাধিক পরিচিতি লাভ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাইমন ড্রিংঃ
একাত্তরে পূর্ব পাকিস্তানে স্বাধিকারের আন্দোলন চলছে। সেই সময় কম্বোডিয়া ও ভিয়েতনাম থেকে তাকে বদলি করা হয় পূর্ব পাকিস্তানে। সম্পূর্ন অজানা এক দেশে পাড়ি জমালেন সাইমন ড্রিং। ১৯৭১ সালের ৬ই মার্চ ঢাকা অবতরন করলেন। পরের দিন ৭ই মার্চ বঙ্গবন্ধুর ঐতিহাসিক ৭ই মার্চের সেই কালজয়ী ভাষনের সাক্ষী হলেন সাইমন। কিন্তু তিনি বাংলা জানতেন না। তাই ভাষনে কি বলা হলো তার কিছুই বুঝতে পারলেন না। কিন্তু ভাষা না জানলে কি হবে, তিনি যে একজন তুখোড় সাংবাদিক। তিতি লক্ষ মানুষের ঢল, মুখের চাহনি, চেহারায় চাপা উত্তেজনা সেই “জয় বাংলা” স্লোগান শুনে তিনি বুঝতে পারলেন এখানে বিরাট এক রাজনৈতিক পট পরিবর্তন ঘটতে চলেছে।
“Tank Crush Revolt in East Pakistan” :
ঢাকার অলি-গলি ঘুরে দেখতে লাগলেন। এরই মধ্যে মুজিব-ইয়াহিয়া বৈঠক ব্যর্থ হয়। সাইমন আন্দাজ করলেন বড় অঘটন ঘটতে চলেছে পূর্ব বাংলায়। ২৫শে মার্চ রাতে হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী কর্তৃক বিদেশি সকল সাংবাদিকদের অবরুদ্ধ করে রাখা হয়। সেখানে সাইমন ড্রিংও ছিলেন। পরের দিন সকল বিদেশি সাংবাদিকদের জোরপূর্বক দেশত্যাগে বাধ্য করা হয়। কিন্তু সাইমন পালিয়ে রক্ষা পেয়েছিলেন। তিনি ঢাকায় সংঘটিত গণহত্যার আলামত সংগ্রহ করে বৃটিশ হাইকমিশনের সহায়তায় ঢাকা থেকে ব্যাংকক গমন করেন। সেখান থেকে লন্ডনের দ্য টেলিগ্রাফে “Tank Crush Revolt in East Pakistan” নামে প্রতিবেদন পাঠালেন। তা প্রকাশ পায় ৩০/০৩/১৯৭১। এই প্রতিবেদন এতটাই শক্তিশালী ও আলোড়ন সৃষ্টিকারী ছিলে যে পূর্ব বাংলার গণহত্যা সম্পর্কে পশ্চিম পাকিস্তানের মুখোশ উন্মোচিত হয়। তিনি লেখেন, “পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী নারকীয় গণহত্যা পরিচালনা করে যা পৃথিবীর ইতিহাসের সকল গণহত্যাকে হার মানায়। ঢাকা এখন এক ভূতুড়ে নগরীতে পরিনত হয়েছে। পূর্ব বাংলার জনগন প্রাণ রক্ষার্থে নিজ দেশের ভিটেমাটি ছেড়ে নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে দেশান্তরিত হচ্ছে।”
সাইমন ড্রিংয়ের এ প্রতিবেদনের ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় সংহতি প্রকাশ করে এবং আর্থিক ও নৈতিক সাহস জুগিয়েছে যা মুক্তিযোদ্ধাদের অনুপ্রাণিত করেচে। যা আমাদের স্বাধীনতার পথকে অনেকটা মসৃন করেছে।
গুনী এই সাংবাদিক ১৬/০৭/২০২১ সালে রোমানিয়ায় মৃত্যুবরণ করেন।
আরও পড়ুন: মুজিবনগর সরকারের চারটি অবদান পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার কে আবিষ্কার করেন? পাহাড়পুর সম্পর্কে বিস্তারিত। বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সংগীত শিল্পীদের অবদান জাতীয় চার নেতার নাম ও পদবী অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কীভাবে ছড়িয়েছিল। সাইমন ড্রিং এর মুক্তিযুদ্ধে অবদান