জর্জ হ্যারিসনঃ
জর্জ হ্যারিসন ১৯৪৩ সালে ইংল্যান্ডের লিভারপুল শহরে জন্মগ্রহন করেন। তিনি ছিলেন বিশ শতকের বিখ্যাত গায়ক ও গিটারিস্ট। বিখ্যাত সংগীত দল বিটলস এর সদস্য ছিলেন। সারাবিশ্বে তার হাজার হাজার ভক্ত সমর্থক রয়েছে। ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি বাংলাদেশের স্বাধীনতার পক্ষে ছিলেন। সংকটকালীন সময়ে বাংলাদেশের অকৃত্রিম সহযোদ্ধা হিসেবে বিখ্যাত সেতারাবাদক পন্ডিত রবিশংকরের সাথে ১৯৭১ সালের ১ আগস্ট কনসার্ট ফর বাংলাদেশ আয়োজন করেন। বাঙালি জাতি তার এ সহযোগিতার জন্য চির কৃতজ্ঞ।
বিটলসের সদস্যঃ
বিটলস ইংল্যান্ডের লিভারপুলের বিশ্বনন্দিত একটি রক সঙ্গীতের দল। এই দলের সদস্য ছিলেন জন লেনন, পল ম্যাকার্টনি, জর্জ হ্যারিসন এবং রিঙ্গো স্টার এই চার জন। বিটলস তৎকালীন সময়ের বিশ্বখ্যাত ছিল। ১৯৬০ এর দশকে বিটলস এর আবির্ভাব ঘটে। বিটলসের সদস্যদের ব্যক্তিগত অমিলের কারনে দলের ফাটল ধরে। ১৯৭০ এ বিটলস আনুষ্ঠানিকভাবে ভেঙে যায়। জজ হ্যারিসন বিখ্যাত সংগীত দল “বিটলস” এর মূল গিটারিস্ট এবং একজন গায়ক ছিলেন। জর্জ হ্যারিসন বিটলসে থাকা অবস্থায় অনেক বিখ্যাত গানের অংশীদার ছিলেন। গানগুলো হলো-
“হোয়াইল মাই গিটার জেন্টলি উইপস”
“এ ডে ইন দ্যা লাইফ”
“আই ওয়ান্ট টু হোল্ড ইয়র হ্যান্ড”
“স্ট্রোবেরি ফিল্ডস ফরইভার”
“ইয়েস্টারডে”
“ইন মাই লাইফ”
“সামথিং”
“লেট ইট বি”
“কাম টুগেদার”
জর্জ হ্যারিসনের একক গানঃ
দলের সদস্যদের অন্তর্কলহের কারনে ১৯৭০ সালে বিটলস ভেঙে যায়।
বিটলসের ভাঙনের পরও জর্জ হ্যারিসনের জনপ্রিয়তা ছিল আকাশ চুম্বি। বিটলস পরবর্তী সময়ে তিনি বিশ্বকে বেশ কিছু জনপ্রিয় গান উপহার দেন। সেগুলো হলো.
হোয়াট ইজ লাইফ (১৯৭০)
হ্যান্ডল উইথ কেয়ার (১৯৮৮)
গিভ মি লাভ (১৯৭৩)
মাই সুইট লর্ড (১৯৭০)
ইজন’ট ইট এ পিটি (১৯৭০)
হোয়েন উই ওয়াজ ফ্যাব (১৯৮৭)
স্টাক ইনসাইড এ ক্লাউড (২০০২)
অল থিংস মাস্ট পাস (১৯৭০)
গট মাই মাইন্ড সেট অন ইউ (১৯৮৭)
মুক্তিযুদ্ধে অবদানঃ
১৯৭১ সালে বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলনের সময় জর্জ হ্যারিসন ভারতীয় বিখ্যাত সেতারাবাদক পন্ডিত রবিশংকের পরামর্শে ১ আগস্ট ১৯৭১ সালে নিউইয়র্কের ম্যাডিসন স্কয়ারে “কনসার্ট ফর বাংলাদেশ” নামে এক কনসার্ট আয়োজন করেন। সেখানে উপস্থিত ৪০,০০০ দর্শকের উপস্থিতিতে বিটলস সংগীত দলের সদস্যরা সংগীত পরিবেশন করেন। এই অনুষ্ঠানে অংশ নিয়েছিলেন বব ডিলান, জর্জ হ্যারিসন, এরিক ক্লাপটন, বিলি প্রিস্টন, লিয়ন রাসেল, ব্যাড ফিঙ্গার, রিঙ্গো রকস্টার এর মতো খ্যাতিমান তারকা শিল্পী। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানি গণহত্যার খবর বিশ্বে ছড়িয়ে দেওয়া এবং মুক্তিযোদ্ধা ও শরণার্থীদের আর্থিক সহায়তা করা এই অনুষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য। এই অনুষ্ঠান হতে প্রাপ্ত ২,৪০,০০০ ডলার ইউনিসেফের মাধ্যমে শরণার্থীদের সহযোগিতায় প্রেরণ করা হয়।
আরও পড়ুনঃ মৌলিক মানবাধিকার কয়টি ও কি কি বিশ্বব্যাংক কবে প্রতিষ্ঠিত হয়, দপ্তর কোথায়, অঙ্গসংগঠন কয়টি, প্রেসিডেন্ট কে? বিশ্বব্যাংক সম্পর্কিত সকল সাধারন জ্ঞান দেখুন এই পোস্টে। ইঞ্জিল কিতাব কোন ধর্মের?
জর্জ হ্যারিসনের ধর্মমতঃ
ব্যক্তিগত জীবনে তিনি ভারতীয় সংস্কৃতির প্রতি আকৃষ্ট হন। ১৯৬০ সালে তিনি নিরামিষাশি হয়ে যান। ১৯৬৯ সাল থেকে হরেকৃঞ্চ সম্প্রদায়ের সদস্য হন আমৃত্যু তিনি এর সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ধর্ম বিশ্বাস সম্পর্কে তিনি বলেন, “পৃথিবীর সকল মতবাদই একটি বৃহৎ বৃক্ষের শাখা তুমি তাকে কি নামে ডাকবে সেটা গুরুত্বপূর্ণ নয়”।
মৃত্যুঃ
১৯৯৭ সালে হ্যারিসনের গলায় ক্যান্সার ধরা পড়ে। ২০০১ সালে ৫৮ বছর বয়সে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়া অঙ্গরাজ্যের লস এন্জেলস এ এই কিংবদন্তী সংগীতজ্ঞ মৃত্যুবরন করেন। হলিউড ফর এভার সিমেট্রিতে তাকে হিন্দু রীতি অনুযায়ী দাহ করা হয়। তার দেহভস্ম কাশির নিকট যমুনা ও গঙ্গা নদীতে ছড়িয়ে দেয়া হয়। জর্জ হ্যারিসনের শেষ অ্যালবাম “Brainwashed” যা অসমাপ্ত রেখেই তিনি মারা যান। পরবর্তীতে তার দুই সন্তান অ্যালবামটির কাজ শেষ করেন।
জর্জ হ্যারিসন, বিটলস এবং কনসার্ট ফর বাংলাদেশ সম্পর্কিত প্রশ্নাবলিঃ
প্রশ্নঃ কনসার্ট ফর বাংলাদেশ কোথায় অনুষ্ঠিত হয়েছিল?
উত্তরঃ ম্যাডিসন স্কয়ার, নিউইয়র্ক, যুক্তরাষ্ট্র।
প্রশ্নঃ কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এ কত দর্শক উপস্থিত ছিলেন?
উত্তরঃ প্রায় ৪০,০০০ (চল্লিশ হাজার)।
প্রশ্নঃ কনসার্ট ফর বাংলাদেশের মাধ্যমে কত টাকা আয় হয়েছিল?
উত্তরঃ ২,৪০,০০০ ডলার।
প্রশ্নঃ কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এর উদ্যোক্তা কে?
উত্তরঃ পন্ডিত রবিশংকর এবং জর্জ হ্যারিসন।
প্রশ্নঃ কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এর মাধ্যমে প্রাপ্ত অর্থ কোথায় প্রেরণ করা হয়?
উত্তরঃ মুক্তিযুদ্ধকালীন বাংলাদেশের শরণার্থীদের জন্য এই অর্থ দান করা হয়।
প্রশ্নঃ বিটলস কি?
উত্তরঃ বিটলস হচ্ছে একটি বিশ্ববিখ্যাত সংগীত দল। এই দলের সদস্য ছিলেন জন লেনন, পল ম্যাকার্টনি, জর্জ হ্যারিসন এবং রিঙ্গো স্টার এই চার জন।
প্রশ্নঃ কনসার্ট ফর বাংলাদেশ এর মূল উদ্দেশ্য কি ছিল?
উত্তরঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ এবং শরণার্থীদের আর্থিক সহযোগিতা এবং পাকিস্তানি বাহিনিীর বর্বরতা বিশ্বকে জানানো।
আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধে সংগীত শিল্পীদের অবদান মুক্তিযুদ্ধের সময় বিপুল শরণার্থী কোথায় এবং কিভাবে আশ্রয় পেয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের ভূমিকা বিস্তারিত দেখুন