মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের ভূমিকা বিস্তারিত।

Table of Contents

মুক্তিযুদ্ধঃ

বিশ্বের মানচিত্রে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভব একটি জলন্ত ইতিহাস । এর পেছনে রয়েছে বিপ্লব, সংগ্রাম, ত্যাগ-তিতিক্ষা ও লক্ষ প্রাণের বলিদান। জাতীবিদ্বেষ, ভৌগোলিক অসঙ্গতি, রাজনৈতিক অস্থিরতার কারনে বৃটিশ সরকার ভারত ভাগ করেন। ১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট পাকিস্তান ও ১৫ আগস্ট ভারত নামে দুটি পৃথক স্বাধীন রাষ্ট্রের অভ্যূদয় ঘটে। বর্তমান বাংলাদেশ তদানীন্তন পূর্ব পাকিস্তান পাকিস্তান রাষ্ট্রের অন্তর্ভূক্ত ছিল। 

পূর্ব পাকিস্তানের জনগন ধারনা করেছিলেন যে, যেহেতু নতুন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠিত হয়েছে এবার হয়তো তাদের আশা-আকাঙ্খা পূরন হবে। অর্থনৈতিক শোষন, রাজনৈতিক অস্থিরতা থেকে রেহাই মিলবে। অল্প সময়ের ব্যবধানেই বাঙালিদের সেই ভূল ভেঙে যায়। কিন্তু আশা যেন মরীচিকা। পাকিস্তান বাঙালিদের ওপর জুলুম  এর শাসন চাপিয়ে দেয়। 

প্রথমেই তারা ভাষার অধিকার কেড়ে নেয়ার চেষ্টা করে। বাংলার আপামর জনগন সেই জঘন্য পরিকল্পনাকে নস্যাত করে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে আদায় করে নেয়। রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক, শিল্প, সরকারি চাকুরি সকল দিক থেকে পূর্ব পাকিস্তান বঞ্চনার শিকার হয়। বাঙালিদের মনে ক্ষোভ দানা বাঁধে।  ফলশ্রুতিতে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে স্বাধীনতা আন্দোলন শৃুরু হয়। ১৯৭১ সালে ২৫ শে মার্চ কালরাত্রে পাকিস্তানি বাহিনী বাঙালি জাতীর ওপর গণহতৗা শুরু করে। শুরু হয় সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধ। বাংলার সর্বস্তরের লোকজন এ যুদ্ধে অংশগ্রহন করে। সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টর, ৬৪টি সাব সেক্টর ও ৩টি ব্রিগেড ফোর্সে বিভক্ত করে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে বাংলার মুক্তিকামী যোদ্ধার যুদ্ধ পরিচালনা করে। 

আরও পড়ুনঃ

অপারেশন সার্চলাইট এর নীল নকশা কে তৈরি করেন

অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কীভাবে ছড়িয়েছিল

সাইমন ড্রিং এর মুক্তিযুদ্ধে অবদান

মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কয়টি ও কি কি

যুক্তফ্রন্ট কেন গঠিত হয়েছিল

এই যুদ্ধে এক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় জড়িয়ে পড়ে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে পাকিস্তান ও তার মিত্ররা বাংলাদেশের স্বাধীনতার যুদ্ধকে পাকিস্তানের  গৃহযুদ্ধ বলে প্রচার করে। মুক্তিযুদ্ধকালীন সময়ে বিশ্বের অনেক দেশই পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল। কিন্তু বাংলাদেশের তৎপরতা, ভরতের সহযোগিতা ও আন্তর্জাতিক সংবাদমাধ্যমগুলো অনবরত বাঙালীদের ওপর পাকিস্তানি বাহিনীর ধ্বংসযজ্ঞের কথা প্রচার করতে থাকে। ফলে বিশ্বে বাংলাদেশের পক্ষে জনমত ‍সৃষ্টি হয় এবং পাকিস্তানের এ হামলার নিন্দা জানানো হয়।  

মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের ভূমিকাঃ

ভারতঃ

মুক্তিযুদ্ধে ভারত বাংলাদেশের পক্ষে ছিল এবং বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতকা করে। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন গঠিত অস্থায়ী সরকার ভারতে তাদের অফিস স্থাপন করে সেখান থেকেই রাষ্ট্রপরিচালনা করত। বাংলার এক কোটি শরণার্থীকে ভারত আশ্রয় দিয়েছিল। মুক্তিবাহিনী ভারতের মাটিতেই তাদের প্রশিক্ষণ কার্যক্রম পরিচালনা করে। ভারত বাংলাদেশের পক্ষে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে বিশ্ব জনমত গঠন করে। ভারত সরকার, ভারতের বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, ভারতের জনগন ও বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন জনগনকে আশ্রয়, চিকিৎসা ও সার্বিক সহযোগিতা প্রদান করে। ভারতের সাংস্কৃতিক ব্যক্তিত্বগন বাংলাদেশের পক্ষে বলিষ্ঠ ভূমিকা রাখে। ভারতের কবি, সাহিত্যিক, সাংবাদিক, কলামিস্ট ও বদ্ধিজীবীরা বাংলাদেশের পক্ষে কলম ধরেছিল। ভারত সরকার আন্তর্জাতিক অঙ্গনে কূটনৈতিক দক্ষতার পরিচয় দেয়। বাংলাদেশ-পাকিস্তান যুদ্ধে যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের সম্ভাব্য আক্রমণ ঠেকাতে ভারত ১৯৭১ সালের আগস্টে রাশিয়ার সাথে মৈত্রী চুক্তি স্বাক্ষর করে। ফলে আমরিকা বেশ চিন্তায় পড়ে যায়। এদিকে ডিসেম্বরের শুরুতে পাকিস্তান ভারতের মাটিতে হামলা চালায়। ফলে ৩ ডিসেম্বর ভারত বাংলাদেশের সাথে পাকিস্তানের বিরুদ্ধে সর্বাত্মক যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। ভারত যুদ্ধে জড়িয়ে যুক্ত হওয়ার কয়েকদিনের মধ্যেই বাংলাদেশ বিজয় অর্জন করে। 

সোভিয়েত ইউনিয়নঃ 

সোভিয়েত ইউনিয়ন মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশের পক্ষে অবস্থান নেয়। ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে পশ্চিম পাকিস্তান কর্তৃক পূর্ব পাকিস্তানে গণহত্যা চালালে সোভিয়েত ইউনিয়ন এর তীব্র নিন্দা জানায় এবং গণহত্যা বন্ধের আহব্বান জানায়। বাঙালি মুক্তিযোদ্ধাদের সামরিক ও আর্থিক সহায়তা করে। মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানকে সহায়তার জন্য অমেরিকা সপ্তম নৌবহর প্রেরণ করলে পাল্টা পদক্ষেপ হিসেবে সোভিয়েত ইউনিয়ন পারমানবিক সাবমেরিন পাঠায়। সোভিয়েত নৌবাহিনী গোপনে পাকিস্তান নৌবাহিনীর বিরুদ্ধে অভিযান পরিচালনা করে। 

চীনঃ

বাংলাদেশের প্রতি চীনের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত হয় ১১ জুলাই চৌ এন লাই এর বিবৃতির মাধ্যমে। চৌ এন লাই পাকিস্তানের স্বাধীনতা এবং সার্বভৌমত্ব রক্ষায় দ্ব্যর্থহীন সমর্থন জানায়। ৭১ সালে চীন পাকিস্তানকে ৪৫ মিলিয়ন ডলার সমমূল্যের অস্ত্র ও গোলাবারুদ পশ্চিম পাকিস্তানকে পাঠায় যার প্রায় সবগুলো বাঙালি নিধনে ব্যবহার করা হয়েছিল। অর্থাৎ চীন মুক্তিযুদ্ধের সময় অন্ধভাবে পাকিস্তানকে সমর্থন করেছিল। 

যুক্তরাষ্ট্রঃ

বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র একপেশে ভাবে পাকিস্তানের পক্ষে কাজ করেছিল যা বাঙালিদের জন্য হতাশার কারন ছিল। মার্কিন প্রশাসন পাকিস্তানকে নৈতিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও সামরিক সহযোগিতা প্রদান করেছিল। পাকিস্তানকে সহযোগিতার জন্য মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অষ্টম নৌবহর প্রেরণ করেছিল যদিও সোভিয়েত ইউনিয়নের কারনে তা আর সম্ভব হয়নি। তবে সরকারি নীতি পাকিস্তান ঘেঁষা হলেও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বিপুল সংখ্যক কংগ্রেস ও সিনেট সদস্য, সরকারি আমলা, বুদ্ধিজীবী, সাধারন জনতা ও সাংবাদিক মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন বাংলাদেশে পাকিস্তানের গণহত্যার তীব্র নিন্দা জানায় এবং বাংলাদেশের পক্ষে ছিল। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বুদ্ধিজীবী ও সাধারন জনতা মার্কিন প্রশাসনকে পাকিস্তানের পক্ষাবলম্বন করার দরুন তীব্র সমালোচনা করে। 

মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রপতি কে ছিলেন?

রিচার্ড নিক্সন।

যুক্তরাজ্যঃ

মুক্তিযুদ্ধে যুক্তরাজ্যে বাংলাদেশের পাশে ছিল। মুক্তিযুদ্ধের খবর প্রচার করতে বৃটিশ গণমাধ্যমগুলো জোরালো ভূমিকা রেখেছে। বৃটিশ পার্লামেন্টের এমপিরা বাংলাদেশের পক্ষে জোরালো সমর্থন দিয়েছিল এবং বাঙালি শরণার্থীদের জন্য অর্থ ও ত্রান সহযোগিতা করেছিল। 

মুক্তিযুদ্ধের সময় যুক্তরাজ্যের প্রেসিডেন্ট কে ছিলেন?

স্যার এডওয়ার্ড হিথ

মুক্তিযুদ্ধে ব্রিটেনের ভূমিকা কি ছিল?

বন্ধুর ভূমিকা পালন করেছিল।

আরও পড়ুনঃ
মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থীরা কোথায় এবং কিভাবে আশ্রয় পেয়েছিল।
মুক্তিযুদ্ধে সংগীত শিল্পীদের অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেখুন এই পোস্টে।
মুক্তিযোদ্ধাদের রাষ্ট্রীয় উপাধি গুলো কি কি
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ১১ নং সেক্টরের নামসহ সকল সেক্টর ও সেক্টর কমান্ডার এর তালিকা,তেলিয়াপাড়া রণকৌশল কি, ব্রিগেড ফোর্স কয়টি ও কি কি বিস্তারিত তথ্য পাবেন এই পোস্টে।
বিশ্বব্যাংক কবে প্রতিষ্ঠিত হয়, দপ্তর কোথায়, অঙ্গসংগঠন কয়টি, প্রেসিডেন্ট কে? বিশ্বব্যাংক সম্পর্কিত সকল সাধারন জ্ঞান দেখুন এই পোস্টে
Scroll to Top
Verified by MonsterInsights