জাতীয় চারনেতার নাম ও পদবী সম্পর্কিত আর্টিকেলে আপনাকে স্বাগতম। এই আর্টিকেলে জাতীয় চারনেতার নাম ও তাদের ব্যক্তিগত পরিচয়ের কছু অংশ তুলে ধরা হয়েছে। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে এই জাতীয় চারনেতা অসামান্য অবদান রেখেছে। বাংলাদেশের ইতিহাসে তাদের অবদান চির অম্লান হয়ে থাকবে। আর্টিকেলটি ধৈর্য্য সহকারে পড়ার জন্য অনুরোধ রইল।
সৈয়দ নজরুল ইসলামঃ
১৯৭১ এ মুক্তিযুদ্ধ এবং দেশকে স্বাধীন করার ক্ষেত্রে সৈয়দ নজরুল ইসলামের সাহসী ভূমিকা রয়েছে। তার জন্ম ১৯২৫ সালে কিশোরগঞ্জ জেলায়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাস বিষয়ে স্নাতক এবং আইনে এল. এল. বি ডিগ্রী লাভ করেন। ভাষা অন্দোলনে সর্বদলীয় একশন কমিটির সদস্য ছিলেন। ৬৬ এর ছয়দফা ঘোষনার ফলে বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার iহলে সৈয়দ নজরুল ইসলাম আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন।
বাংলাদেশের প্রথম অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি। ১৭এপ্রিল ১৯৭১ সাল থেকে ১০ জানুয়ারি ১৯৭২ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধুর অনুপস্থিতিতে অস্থায়ী রাষ্ট্রপতি হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে তিনি শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। ৭৫ এর ১৫ ই আগস্ট বঙ্গবন্ধুকে হত্যার পর সৈয়দ নজরুল ইসলামকে প্রথমে গৃহবন্দী এবং পরে ২৩শে আগস্ট তাকে গ্রেপ্তার করা হয়। ১৯৭৫ এর ৩ নভেম্বর কারাগারে সৈয়দ নজরুল ইসলামকে নির্মমভাবে হত্যা করা হয়।
তাজউদ্দিন আহমদঃ
বাংলাদেশের প্রথম প্রধানমন্ত্রী সৈয়দ তাজউদ্দিন আহমদ। বাংলাদেশের স্বাধীনতার অন্যতম সংগঠক ও মূল কারিগর সৈয়দ তাজউদ্দিন আহমদ। তাজউদ্দিন আহমদ ১৯২৫ সালে গাজীপুরের কাপাসিয়ায় জন্মগ্রহন করেন। তাজউদ্দিন আহমদ কোরআনের হাফেজ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগ হতে স্নাতক ডিগ্রী লাভ করেন। ১৯৪৩ সালে মুসলিম লীগের রাজনীতিতে সম্পৃক্ত হন। ভাষা আন্দোলনের সময় সর্বদলীয় সংগ্রাম কমিটির গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্টের সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। ১৯৬৬ সালে আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পান। ১৯৬৬ সালে ছয় দফা ঘোষনায় তিনিও বঙ্গবন্ধুর সাথে গ্রেপ্তার হন এবং ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যূথানে জেল থেকে মুক্তি পান। ১৯৭০ এর নির্বাচনে জাতীয় পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন।
৭১ এ বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে গ্রেপ্তার করলে তাজউদ্দিন আহমদ অস্থায়ী সরকার গঠন করে মুক্তিযুদ্ধ পরিচালনা করে। ১৯৭১ সালের ১০ এ এপ্রিল মেহেরপুরের মুজিবনগরে অস্থায়ী সরকার গঠিত হয় এবং ১৭ এপ্রিল এ অস্থায়ী সরকার শপথ গ্রহণ করে। তাজউদ্দিন আহমদ মুজিবনগর সরকারের প্রধানমন্ত্রী এবং প্রতিরক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বপালন করে। তাজউদ্দিনের বলিষ্ঠ নেতৃত্বে বাংলাদেশ স্বাধীনতা লাভ করে।
তিনি ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধীর সাতে সাক্ষাৎ করে মুক্তিযুদ্ধের জন্য সর্বাত্মক সহযোগিতার জন্য সাহায্য প্রয়োজন মর্মে প্রস্তাব পেশ করেন। দিল্লি ও মুক্তিযুদ্ধে বাংলাদেশকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করে।
এম মনসুর আলীঃ
১৯১৯ সালে এম মনসুর আলী সিরাজগঞ্জ জেলায় জন্মগ্রহণ করেন। তিনি আলীগড় মুসলিম বিশ্ববিদ্যালয় হতে অর্থনীতিতে এম. এ ডিগ্রী লাভ করেন। এল.এল.বি ডিগ্রীও সম্পন্ন করেন। ১৯৪৬-৫০ পর্যন্ত পাবনা জেলা মুসলিম লীগের সহ সভাপতি পদে দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৫১ সালে আওয়ামী মুসলিম লীগে যোগদেন। রাষ্ট্রভাষা আন্দোলনে তিনি গ্রেপ্তার হন। ১৯৫৪ সালে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট নির্বাচনে প্রাদেশিক পরিষদের সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৬৬ এর ছয় দফা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন । ৭০ এর নির্বাচনে জয়লাভ করেন। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে তিনি ভারতে চলে যান। সেখানে আওয়ামী লীগের গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে মিলিত হন। পরে মুজিবনগর সরকার গঠিত হলে তিনি মুজিবনগর সরকারের অর্থমন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে স্বরাষ্ট্র ও যোগাযোগ মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ সালের ৩রা নভেম্বর কারাগারে তাকে হত্যা করা হয়।
এ এইচ এম কামরুজ্জামানঃ
বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামের অন্যতম নেতা এ এইচ এম কামরুজ্জামান ১৯২৩ সালে নাটোরে জন্মগ্রহন করেন। তার পৈতৃক বাড়ি রাজশাহীর কাদিরগঞ্জ এলাকায়। কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে আইনে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন। ছাত্র জীবন থেকেই তিনি রাজনীতির সাথে যুক্ত হন। ১৯৪৩-৪৫ পর্যন্ত বঙ্গীয় মুসলিম ছাত্র লীগের সহ সভাপতি ছিলেন। ১৯৫৬ সালে আওয়ামীলীগে যোগ দেন। ১৯৬৬ সালের ছয় দফা আন্দোলনে যোগ দেন। মুজিবনগর সরকারের স্বরাষ্ট্র, কৃষি, ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। স্বাধীনতা পরবর্তী সময়ে দেশের ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রনালয়ের দায়িত্ব পালন করেন। ১৯৭৫ এর ৩রা নভেম্বর কারাগারে তাকে হত্যা করা হয়।