সুপ্রিয় দর্শক, “মাদার তেরেসা সম্পর্কে ১০টি বাক্য” এই আর্টিকেলে আপনাকে স্বাগতম। মাদার তেরেসা মানব ইতিহাসে এক মহিয়সী নারীর নাম যিনি তার সমগ্র জীবন মানবসেবায় নিজেকে উৎসর্গ করেছেন। সমাজের অবহেলিত, নির্যাতিত ও অবাঞ্চিত মানুষকে আশ্রয় দিয়ে পরম মমতায় সেবা করেছেন। পৃথিবীতে সুন্দর ভাবে বাঁচার জন্য পরিবেশ করে দিয়েছেন। মাদার তেরেসাকে জীবন্ত কিংবদন্তী হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়েছে।
মাদার তেরেসার প্রাথমিক জীবনঃ
মাদার তেরেসা যার প্রকৃত নাম অ্যাগনিস গোঞ্জা বোঝাঝিউ। তিনি মেসিডোনিয়ার স্কোপজে ১৯১০ সালে জন্মগ্রহণ করেন। তিন ভাইবোনের মধ্যে সবার ছোট অ্যাগনিস হয়ে ওঠেন মানবতার ফেরিওয়ালা মাদার তেরেসা। মাত্র আট বছর বয়সেই পিতাকে হারিয়ে কিছুটা কষ্টের মধ্যেই বেড়ে ওঠেন। ধর্মপ্রচারকদের জীবন ও কর্ম ছোটবেলা থেকেই তাকে আকৃষ্ট করত। মাত্র ১২ বছর বয়সেই সিদ্ধান্ত নেন বড় হয়ে ধর্মপ্রচারক হবেন। ১৮ বছর বয়সে আয়ারল্যান্ডের “সিস্টারর্স অব লোরেটো” যোগ দেন। ১৯২৯ সালে ভারতের দার্জিলিং এ নবদীক্ষিত হিসেবে কাজ শুরু করেন এবং ১৯৩১ সালে সন্ন্যাসিনী হিসেবে শপথ গ্রহণ করেন।মাদার তেরেসা খুবই নিয়মানুবর্তিতা মেনে চলতেন।
মাদার তেরেসা সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
১। মাদার তেরেসা ১৯১০ সালে মেসিডোনিয়ার স্কোপজেতে জন্মগ্রহণ করেন। তার প্রকৃত নাম অ্যাগানিস গঞ্জা বোজাঝিউ।
২। তিনি ১৮ বছর বয়সে ধর্ম প্রচারক হিসেবে আয়ারল্যান্ডের সিস্টারর্স অব লোরেটায় যোগ দেন।
৩। ১৯৫০ সালে মিশনারিজ অব চ্যারিটি প্রতিষ্ঠা করেন।
৪। দরিদ্রদের চিকিৎসার জন্য তিনি “নির্মল হৃদয়” প্রতিষ্ঠা করেন।
৫। কুষ্ঠ রোগীদের সেবাদানের জন্য “শান্তি নগর” প্রতিষ্ঠা করেন।
৬। যুদ্ধ শিশুদের সংগ্রহ করে তাদের বড় করে তোলেন।
৭। তিনি ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কারে ভূষিত হন।
৮। ১৯৮০ সালে ভারত সরকার তাকে ভারতের সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব “ভারতরত্ন” প্রদান করে।
৯। ২০১৬ সালে সেন্ট হিসেবে স্বীকৃতি লাভ করেন।
১০। ১৯৯৭ সালের ৫ই সেপ্টেম্বর মাদার তেরেসা মৃত্যুবরণ করেন।
আরও পড়ুন: মুজিবনগর সরকারের চারটি অবদান পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার কে আবিষ্কার করেন? পাহাড়পুর সম্পর্কে বিস্তারিত। পাহাড়পুর সম্পর্কে ১০টি বাক্য মহাস্থানগড় সম্পর্কে ১০ টি বাক্য ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম।
মাদার তেরেসার মানবসেবায় অবদানঃ
১৯৪৬ সালে দরিদ্রদের জন্য কাজ করার বিষয়ে কিছুটা মনস্থির করেন। সেই চিন্তা মোতাবেক ১৯৪৮ সালে প্রথাগত লোরেটা অভ্যাস ত্যাগ করে নীল পাড়ের সাদা সুতি শাড়ি পরিধান করে কলকাতার দরিদ্রতম জনগোষ্ঠীর মধ্যে কাজ শুরু করেন। ক্ষুধার্ত ও নিঃসদের পাশে দাড়ালেন। প্রথম দিকের দিনগুলো তার জন্য কষ্টের ছিল। তার কাছে তেমন অর্থ ছিল না। তাই গরিব ও অনাহারীদের খাবারের জন্য ধনীদের দ্বারে দ্বারে ঘুরতেন। ১৯৫০ সালে মিশনারিজ অব চ্যারিটি প্রতিষ্ঠার জন্য ভ্যাটিক্যানের অনুমতি লাভ করেন। কলকাতায় মাত্র ১৩ জন সদস্য নিয়ে মিশনারিজ অব চ্যারিটির যাত্রা শুরু হয়।
১৯৫২ সালে কলকাতা নগর কর্তৃপক্ষের দেয়া জমিতে মুমূর্ষুদের জন্য আশ্রয় ও সেবাকেন্দ্র গড়ে তোলেন। পরে একটি পরিত্যক্ত হিন্দু মন্দিরে দাতব্য চিকিৎসা কেন্দ্র গড়ে তোলেন। পরে এর নাম রাখা হয় “নির্মল হৃদয়”। এখানে চিকিৎসার পাশাপাশি “কৃপামৃত্যু” র ব্যবস্থা ছিল। এর অল্প সময় পরে কুষ্ঠু রোগীদের চিকিৎসার জন্য “শান্তি নগর” প্রতিষ্ঠা করেন। হোমের শিশুর সংখ্যা বেড়ে গেলে এতিম শিশুদের জন্য “নির্মল শিশু ভবন” স্থাপন করেন।
মাদার তেরেসার কর্মকান্ড দেশে-বিদেশে সুনাম কুড়াতে থাকে। তৎকালীন ভারতের প্রধানমন্ত্রী ও মাদার তেরেসার কাজের স্বীকৃতি দেন। খুব দ্রুত তার পরিচিতি ও প্রসার ঘটতে থাকে। জাতীয় ও আন্তর্জাতিক অনেক দাতব্য প্রতিষ্ঠান এগিয়ে আসে। অল্প সময়ে প্রচুর অর্থায়নের ব্যবস্থা হয়। ফলে ১৯৬০ এর দশকে পুরো ভারতে মিশনারিজ অব চ্যারিটির শাখা স্থাপিত হতে থাকে। সর্ব ভারতে মাদার তেরেসার সেবা ছড়িয়ে পড়ে।
ভারতের বাইরে মিশনারিজ অব চ্যারিটির প্রথম শাখা স্থাপিত হয় ভেনিজুয়েলায় ১৯৬৫ সালে। ১৯৬৮ সালে রোম, তানজানিয় ও অস্ট্রিয়ায় শাখা চালু হয়। ৭০ এর দশকে এশিয়া, আফ্রিকা, ইউরোপ ও আমেরিকায় মিশনারিজ অব চ্যারিটির শাখা চালু হয়।
মাদার তেরেসা “গর্ভপাত” ও “বিবাহ বিচ্ছেদ” এর বিরুদ্ধে সব সময় সোচ্চার ছিলেন। মাদার তেরেসা ১৯৮২ সালে লেবাননের বৈরুতের যুদ্ধের মাঝখান থেকে ৩৭ শিশুকে উদ্ধার করেন। ইথিওপিয়ার ক্ষুধার্তদের জন্য ত্রাণে পাঠাতেন। চেরনোবিল পারমানবিক তেজস্ক্রিয়তায় ক্ষতিগ্রস্তদের সেবায় পাশে দাড়িয়েছিলেন। আমেরিকার ভূমিকম্পে ক্ষতিগ্রস্তদের সহায়তার হাত বাড়িয়েছিলেন।
মাদার তেরেসা তার কাজের স্বীকৃতি স্বরূপ ১৯৭৯ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন। ১৯৮০ সালে ভারত সরকার সর্বোচ্চ বেসামরিক খেতাব “ভারতরত্ব” উপাধি