সুপ্রিয় দর্শক, অপারেশন সার্চলাইটের নীল নঁকশা কে তৈরি করেন এবং অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত বিষয়ক আর্টিকেলে আপনাকে স্বাগতম। অপারেশন সার্চলাইট সাংকেতিক নামে পাকিস্তান সেনারা মূলত বাঙালি নিধনে নেমেছিল। ২৫ শে মার্চ ১৯৭১ ঢাকা সহ পুরো বাংলাদেশকে তারা কবরস্থানে পরিনত করেছিল। সবদিকে শুধু লাশ আর লাশ। এই আর্টিকেলে অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত তুলে ধরা হয়েছে। আর্টিকেলটি মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
অপারেশন সার্চলাইটের প্রেক্ষাপটঃ
১৯৭১ সাল বাংলাদেশের ইতিহাসে একটি গুরত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সূচনা হয়। দীর্ঘ নয় মাস রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মাধ্যমে বাংলাদেশ পাকিস্তানের কাছ থেকে স্বাধীনতা লাভ করে। প্রায় ত্রিশ লক্ষ শহীদ ও দুই লক্ষ মা বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে আমাদের স্বাধীনতা অর্জিত হয়। ৭১ এর ২৫শে মার্চ নিরীহ ও নিরস্ত্র বাঙালির ওপর পাক বাহিনী “অপারেশন সার্চলাইটের” নামে এক পাশবিক ও বর্বরোচিত হামলা পরিচালন করে। বাংলাদেশের বড় শহরগুলোর নিয়ন্ত্রন নেয়া ও আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তার করে পুরো বাংলাদেশকে পাকিস্তানের অধীন করে রাখাই ছিল অপারেশন সার্চলাইটের উদ্দেশ্য। কিন্তু অদম্য বাঙালী পশ্চিম পাকিস্তানিদের ঘৃণ্য পরিকল্পনাকে নস্যাৎ করে বিজয় ছিনিয়ে আনে।
অপারেশন সার্চলাইটঃ
১৯৭১ এর ২৫শে মার্চ পাকিস্তানি সামরিক বাহিনী পূর্ব পাকিস্তনের নিরীহ জনগনের ওপর যে নৃশংস গণহত্যা চালায় তার সাংকেতিক নাম ছিল “Operation Searchlight”। এ হামলার উদ্দেশ্য ছিল পূর্ব পাকিস্তানে কর্ততৃ প্রতিষ্ঠা করা। সমগ্র বাংলায় যে অসহযোগ আন্দোলন সংঘটিত হচ্ছে চিরতরে তাকে নস্যাৎ করা এবং পরবর্তীতে যেন কোন বিদ্রোহ মাথা চাড়া দিতে না পারে সে লক্ষ্যে এ অপারেশন সার্চলাইটের নীল নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করা হয়েছিল। ২৫শে মার্চ মধ্যরাতে সারাদেশে একযোগে এ অপারেশন পরিচালনা করা হয়। ঢাকা সহ সমগ্র দেশ এক ধ্বংসস্তূপে পরিনত করা হয়। এক রাতেই প্রায় পঞ্চাশহাজার বাঙালিকে শহীদ করা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে সবচেয়ে বেশি হতাহতের ঘটনা ঘটে। জাতীর বিবেক কে সেদিন টুটি চেপে ধরা হয়েছিল।
অধ্যাপক জি.জি. দেব, অধ্যাপক জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা, অধ্যাপক আনোয়ার পাশা, অধ্যাপক ফজলুর রহমান সহ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশজন শিক্ষক সেদিন হামলায় নিহত হন। আরও অনেকে আহত হন।
এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বহু শিক্ষার্থী ও কর্মকর্তা-কর্মচারী কে হত্যা করে পাক বাহিনী। শুধা এখানেই শেষ নয় ১৪ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বুদ্ধিজীবীদের বেছে বেছে হত্যা করে পাক হানাদার বাহিনী।
আরও পড়ুনঃ অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কীভাবে ছড়িয়েছিল সাইমন ড্রিং এর মুক্তিযুদ্ধে অবদান মুজিবনগর সরকারের চারটি অবদান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সংগীত শিল্পীদের অবদান
অপারেশন সার্চলাইট এর নীল নকশা কে তৈরি করেনঃ
২৫শে মার্চ অপারেশন সার্চলাইট বাস্তবায়ন করা হলেও এর পরিকল্পনা করা হয়েছিল ১৮ই মার্চ। ১৬ই মার্চ ইয়াহিয়া-মুজিব আলোচনা শুরু হয় ঢাকায়। ঢাকার পরিস্থিতি উত্তপ্ত। পাকিস্তানের প্রেসিডেন্ট ইয়াহিয়া খান পূর্ব পাকিস্তনের প্রধান সামরিক কর্মকর্তা টিক্কা খানকে বলেন,“ রাজনৈতিক সমঝোতা না হলে সামরিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে পূর্ব পাকিস্তানে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে হবে”।
১৮মার্চ খাদিম হোসাইন রাজা ও রাও ফরমান আলী পূর্ব বাংলায় সামরিক আগ্রাসনের অর্থাৎ অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা করেন।
অপারেশন সার্চলাইটের এ অভিযানে ঢাকা অঞ্চলের দায়িত্ব নেন রাও ফরমান আলী এবং ঢাকার বাইরের দায়িত্ব নেন খাদিম হোসাইন রাজা।
অর্থাৎ মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী ও মেজর জেনারেল খাদিম হোসেন রাজা অপারেশন সার্চলাইটের পরিকল্পনা করেন।
অপারেশন সার্চলাইটের ব্যাপ্তকাল পরিকল্পনা করা হয়েছিল ২৫শে মার্চ হতে ১০ এপ্রিল পর্যন্ত।
অপারেশন সার্চলাইটের মূল পরিকল্পনাঃ
- সমগ্র বাংলায় একযোগে মিলিটারি হামলা শুরু করা হবে।
- পূর্ব পাকিস্তানের রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ, ছাত্রসংগঠনের নেতৃবৃন্দ, ও বুদ্ধিজীবীদের গ্রেপ্তার করতে হবে।
- ঢাকার অপারেশন শতভাগ সফল করেতে হবে।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় দখলে নিতে হবে।
- টেলিফোন, টেলিভিশন, রেডিও ও টেলিগ্রাফের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন করা হবে।
- বাঙালি সৈনিকদের নিরস্ত্র করা হবে।
অপারেশন সার্চলাইট সফল করার জন্য পাকিস্তান সেনাবাহিনী পূর্বেই যে ব্যবস্থা গ্রহন করেনঃ
অপারেশন সফল করার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পদগুলো হতে বাঙালী অফিসারদের বদলী করে সে জায়গা গুলোতে পাকিস্তানি অফিসারদের নিযুক্ত করে।
২৫ শে মার্চ ঢাকায় মেজর জেনারেল খাদেম ঢাকায় যেসব লক্ষ্য নির্ধারন করেঃ
- রাত ১১ টায় ঢাকায় কারফিউ জারি করা।
- রেডিও ও টেলিভিশন এবং পত্রিকা অফিস বন্ধ করা।
- সড়ক,রেল ও নৌপথে ঢাকা থেকে সমগ্র প্রদেশকে বিচ্ছিন্ন করা।
- মুজিব সহ আওয়ামী লীগের বড় ১৫ নেতাকে গ্রেপ্তার করা।
- ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, রাজারবাগ পুলিশ লাইন, ইপিআর কে ধ্বংস ও পরাভূত করতে হবে।
- ২য় ও ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টকে নিরস্ত্রীকরন করতে হবে।
- গাজীপুরের অস্ত্র কারখান দখল এবং রাজেন্দ্রপুরের অস্ত্রগুদামের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে।
আরও পড়ুনঃ যুক্তফ্রন্ট কেন গঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে জর্জ হ্যারিসনের অবদান। মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থীরা কোথায় এবং কিভাবে আশ্রয় পেয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের ভূমিকা বিস্তারিত। মুক্তিযুদ্ধে সংগীত শিল্পীদের অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেখুন এই পোস্টে। শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে ১০ টি বাক্য জাতীয় চার নেতার নাম ও পদবী মুজিবনগর সরকারের সদস্য ছিলেন কে কে এ সম্পর্কে বিস্তারিত।