পাকিস্তান রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠার পর থেকেই পূর্বের প্রতি পশ্চিমের বৈষম্যমূলক আচরণের সূত্রপাত। প্রথমে ভাষা, তারপর শিক্ষা, শিল্প, সামরিক, অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক সকল ক্ষেত্রে। বাংলার অকুতোভয় জনতা শুরু থেকেই এসকল বৈষম্যের প্রতি সোচ্চার ছিল তারা রাজপথ থেকে সংলাপের টেবিলে সব জায়গায় পাকিস্তানের শোষনের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে। কিন্তু কোন লাভ হয় নি। ১৯৭০ সালের জাতীয় নির্বাচনে পূব বাংলার জনগন ভোটের মাধ্যমে তাদের রায় প্রদান করে। জাতীয় প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশ বিজয় লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তানের ইয়াহিয়া খান সরকার ক্ষমতা হস্তান্তরে টালবাহানা ও নানা ধরনের ফন্দি আঁটতে থাকে। শেষে বাংলায় অসহযোগ আন্দোলনের ডাক দেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ ভয়ালরাতে অপারেশন সার্চলাইট নামে পূর্ব বাংলার নিরীহ ও নিরস্ত্র জনগনের ওপর বর্বর গণহত্যা পরিচালনা করে। শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধঃ
মুক্তিযুদ্ধ বাঙালি জাতীর একটি গৌরবোজ্জ্বল অধ্যায়। নয় মাস রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব একটি মানচিত্র ও আমাদের পতাকা। ১৯৭১ এর ২৫ মার্চ পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী হায়েনার মতো ঝাপিয়ে পড়ে নিরীহ-নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। ২৬শে মার্চ পাকিস্তানিদের বিরুদ্ধে বাঙালি জাতি সর্বাত্মক যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর বাংলাদেশে স্বাধীনতা লাভ করে। যুদ্ধে ৩০ লক্ষ বাঙালি শহীদ হন এবং অসংখ্যা মা বোন তাদের ইজ্জত হারায়।
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কয়টি ও কি কি
১৯৭১ সালে সংঘটিত যুদ্ধ পরিচালনার জন্য তৎকালীন বাংলাদেশের অস্থায়ী সরকার সমগ্র বাংলাদেশকে ১১টি সেক্টর, ৬৪টি সাব সেক্টর ও ৩টি ব্রিগেড ফোর্সে ভাগ করা হয়।
সেক্টর নং | সেক্টরের বিবরণ | সেক্টর কমান্ডার |
১ নং সেক্টর | চট্রগ্রাম, পার্বত্য চট্রগ্রাম ও নোয়াখালী জেলার অংশবিশেষ। | মেজর জিয়াউর রহমান ও মেজর রফিকুল ইসলাম |
২ নং সেক্টর | ফরিদুপরের পূর্বাঞ্চল, ঢাকা এবং এর দক্ষিনাংশ, কুমিল্লার আখাউড়া-ভৈরব রেললাইন পর্যন্ত এবং নোয়াখালি জেলা। | মেজর খালেদ মোশারফ এবং মেজর এটিএম হায়দার |
৩ নং সেক্টর | কুমিল্লার বাকি অংশ, সিলেটের হবিগঞ্জ, কিশোরগঞ্জ, ঢাকার বাকি অংশ। | মেজর কে এম শফিউল্লাহ এবং মেজর এএনএম নুরজ্জামান। |
৪ নং সেক্টর | সিলেট জেলার বাকি অংশ | মেজর চিত্ত রঞ্জন। |
৫ নং সেক্টর | সিলেট ডাউকি সড়ক থেকে সিলেটের সমগ্র উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল। | মেজর মীর শওকত আলী |
৬ নং সেক্টর | সমগ্র রংপুর এবং দিনাজপুর জেলার ঠাকুরগাঁও মহকুমা। | উইং কমান্ডার মোহাম্মাদ খাদেমুল বাশার |
৭ নং সেক্টর | বগুড়া , রাজশাহী, পাবনা এবং দিনাজপুর জেলার দক্ষিনাঞ্চল। | ১০ এপ্রিল হতে ২৭ শে সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মেজর নাজমুল। ২৮ সেপ্টেম্বর হতে মেজর কাজী নুরজ্জামান। |
৮ নং সেক্টর | কুষ্টিয়া, যশোর, খুলনা ও ফরিদপুর। | মেজর আবু ওসমান এবং মেজর এম এ মনজুর। |
৯ নং সেক্টর | খুলনার বাকি অংশ, বরিশাল ও পটুয়াখালী। | মেজর এম এ জলিল |
১০ নং সেক্টর | মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র নৌ সেক্টর। | নিয়মিত কোন সেক্টর কমান্ডার ছিলেন না। |
১১ নং সেক্টর | কিশোরগঞ্জ বাদে সমগ্র টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ। | মেজর আবু তাহের ও মেজর এ এন এম হামিদুল্লাহ। |
আরও পড়ুন: বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সংগীত শিল্পীদের অবদান অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কীভাবে ছড়িয়েছিল। সাইমন ড্রিং এর মুক্তিযুদ্ধে অবদান যুক্তফ্রন্ট কেন গঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে জর্জ হ্যারিসনের অবদান। মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের ভূমিকা বিস্তারিত। মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থীরা কোথায় এবং কিভাবে আশ্রয় পেয়েছিল।