৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম
সম্মানিত দর্শক এই পোস্টে আপনাকে স্বাগতম। এই পোস্টে বুদ্ধিজীবীর সংজ্ঞা, বুদ্ধিজীবীদের কেন হত্যা করা হয়েছিল, বুদ্ধিজীবী হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী কে এবং বিখ্যাত ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম-পরিচয় সম্পর্কে আলোকপাত করা হয়েছে।
১৯৪৭ এ দেশভাগের পর থেকেই পাকিস্তান শাসকগোষ্ঠী পূর্ব পাকিস্তানের সাথে বৈষমের নীতি গ্রহন করে। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলন হতে শুরু করে ছয়দফা, গণঅভ্যূত্থান হয়ে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধর মাধ্যমে স্বাধীন বাংলাদেশ রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। এই স্বাধীনতার জন্য অনেক আত্মত্যাগ করতে হয়েছে বাঙালি জাতীকে। মুক্তিযুদ্ধের পুরো সময় জুড়ে পাক বাহিনী তালিকা করে ধরে ধরে বাঙালি জাতীর শ্রেষ্ঠ সন্তান বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। বাঙালি জাতীকে মেধাশূণ্য করাই ছিল পাক সেনাদের লক্ষ্য। আর এই বুদ্ধিজীবী নিধন মিশনে পাক সেনাদের সহায়তা করে এদেশীয় রাজাকার, আল বদর, আল শামস বাহিনীর কুখ্যাত দোসররা।
এখন স্বাভাবিক ভাবে প্রশ্ন আসে যে বুদ্ধিজীবী কারা?
বুদ্ধিজীবী হলো সে ক্যাটাগরির লোকজন যারা বুদ্ধিবৃত্তিক ক্ষমতার ব্যবহার করে জীবীকা অর্জন করে এবং দেশ, জাতী ও রাষ্ট্রকে ন্যায়, ভালো ও মঙ্গলের দিকে পরিচালিত করতে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ ভূমিকা রাখে। যেমন, শিক্ষক, সাংবাদিক, সাহিত্যিক, দার্শনিক, আইনজীবী, ডাক্তার, প্রকৌশলী, সমাজসেবী, রাজনৈতিক কর্মী প্রভৃতি। বুদ্ধিজীবী এর ইংরেজি প্রতিশব্দ ‘intelligentsia’।
মুজিবনগর সরকারের চারটি অবদান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সংগীত শিল্পীদের অবদান পাহাড়পুর সম্পর্কে ১০টি বাক্য মহাস্থানগড় সম্পর্কে ৫ টি বাক্য সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের ১০ টি উপায়
পাকিস্তানিরা কেন বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করল?
১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ পাকিস্তানি সেনাবাহিনী “অপারেশন সার্চলাইট” নামে বাঙালি নিধন হত্যাযজ্ঞ শুরু করে। এর ফলে বাঙালি মুক্তিকামী জনগন সর্বাত্মক মুক্তিযুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। নয় মাস চলে এই মুক্তিযুদ্ধ। মুক্তিযুদ্ধের শুরু সেই ২৫ শে মার্চ হতেই পাক সেনারা বাঙালি বুদ্ধিজীবীদের টার্গেট করে হত্যা করতে থাকে। যুদ্ধের পুরো সময় তারা অসংখ্য বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। যুদ্ধের শেষদিকে পাকিস্তানি সেনাবাহিনী যখন বুঝতে পারে তাদের পক্ষে যুদ্ধে জেতা সম্ভব নয় তখন তারা পরিকল্পনা মাফিক বুদ্ধিজীবী নিধন শুরু করে। ১৯৭১ এর ডিসেম্বরের ১০-১৪ তারিখে তারা সর্বোচ্চ সংখ্যক বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে। তাদের লক্ষ্য স্বাধীন বাংলাদেশকে মেধাশূণ্য করা। বাংলাদেশ যাতে বিশ্বের দরবারে মাথা তুলে দাঁড়াতে না পারে সেলক্ষ্যে তারা বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করে।
বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনাকারীঃ
পাকিস্তান সেনাবাহিনীর পূর্বাঞ্চলীয় কমান্ডার লে. জেনারেল নিয়াজির নেতৃত্বে সামরিক উপদেষ্টা মেজর জেনারেল রাও ফরমান আলী খান বুদ্ধিজীবী হত্যার পরিকল্পনা করে। এ হত্যাকান্ডের সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল আসলাম, কর্নেল তাজ, ক্যাপ্টেন তারেক। দৈনিক আজাদ পত্রিকা অনুযায়ী বুদ্ধিজীবী হত্যায় পাক সেনাদের সহযোগিতা করে আল বদর ও আল শাসন এর কর্মীরা। তারা বুদ্ধিজীবীদের তালিকা পাক সেনাবাহিনীকে সরবরাহ করতো। অনেক সময় আল বদর ও আল শামস এর কর্মীরাও বুদ্ধিজীবীদের হত্যা করত।
৫ জন বুদ্ধিজীবীর নামঃ
ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেবঃ
ড. গোবিন্দ চন্দ্র দেব ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শনের অধ্যাপক। তিনি ১৯৬০ হতে আমৃত্য পাকিস্তান দর্শন সমিতির সভাপতির দায়িত্ব পালন করেন। বিশ্বব্যাপী মানবিক দর্শন প্রচারের জন্য ‘The Govinda Dev Foundation for World Brotherhood’ প্রতিষ্ঠা করেন। গোবিন্দ চন্দ্র দেব ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ রাতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের বাসভবনে পাকিস্তান সেনাবাহিনীর গুলিতে নিহত হন।
মুনীর চৌধুরীঃ
একাধারে বিখ্যাত নাট্যকার, ভাষাতত্ত্ববিদ, সাহিত্য সমালোচক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক মুনীর চৌধুরী যার প্রকৃত নাম আবু নয়ীম মোহাম্মাদ মুনীর চৌধুরী। মুনীর চৌধুরী বাংলা টাইপরাইটারের জন্য উন্নত ধরনের কিবোর্ড ’মুনীর অপটিমা’ উদ্ভাবন করেন। তিনি কবর, রক্তান্ত প্রান্তর, পলাশীর ব্যারাক, চিঠি, দণ্ডকারণ্য সহ অনেক বিখ্যাত নাটকের রচিয়তা। গুণী এই বুদ্ধিজীবী ১৪ ডিসেম্বর ১৯৭১ সালে আল বদর বাহিনীর সদস্যদের হাতে নিহত হন।
শহীদুল্লাহ কায়সারঃ
শহীদুল্লাহ কায়সার একজন বিখ্যাত সাহিত্যিক ও সাংবাদিক এবং একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী। তিনি রচনা করেছেন সারেং বৌ, সংশপ্তক উপন্যাস, পেশোয়ার থেকে তাসখন্দ ভ্রমণবৃত্তান্ত এবং রাজবন্দীর রোজনামচা এর রচিতয়তা তিনি। কর্মজীবনে তিনি সাপ্তাহিক ইত্তেফাক, দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় কর্মরত ছিলেন। ভাষা আন্দোলনে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকায় ছিলেন। ১৯৭১ সালের ১৪ ডিসেম্বর আল বদর বাহিনীর সদস্যের হাতে অপহৃত ও নিহত হন।
ধীরেন্দ্রনাথ দত্তঃ
ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত পূর্ব পাকিস্তানের একজন বিখ্যাত রাজনীতিবিদ । তিনি মহাত্মা গান্ধীর নেতৃত্বে বৃটিশদের বিপক্ষে অসহযোগ আন্দোলন, ভারত ছাড় আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। বায়ান্নর ভাষা আন্দোলনে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা প্রতিষ্ঠার বিষয়ে একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত বাঙালি জাতীয়তাবাদে বিশ্বাসী একজন সক্রিয় রাজনৈতিক কর্মী ছিলেন। ১৯৭১ সালের ২৫শে মার্চ ধীরেন্দ্রনাথ দত্তকে বন্দী করে ময়নামতি কারাগারে আটক রাখা হয়। সেখানে অমানুষিক নির্যাতনে তাকে জর্জরিত করা হয়। তার ওপর এতটাই পাশবিক নির্যাতন চালানো হয় যে তাকে হামাগুড়ি দিয়ে টয়লেটে যেতে হয়। পাশবিক নির্যাতনের পর তাকে সেখানেই হত্যা করা হয়।
জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতাঃ
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক একাত্তরের শহীদ বুদ্ধিজীবী জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা। একাত্তর সালে জগন্নাথ হলের আবাসিক শিক্ষক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন। মুক্তিযুদ্ধের প্রথম প্রহরেই ১৯৭১ সালের ২৫ শে মার্চ জ্যোতির্ময় গুহ ঠাকুরতা পাক সেনার হাতে শহীদ হন ।
আরও পড়ুন: শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস সম্পর্কে ১০ টি বাক্য প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের ৫টি উপায় মুজিবনগর সরকারের সদস্য ছিলেন কে কে এ সম্পর্কে বিস্তারিত। জাতীয় চার নেতার নাম ও পদবী অপারেশন সার্চলাইট এর নীল নকশা কে তৈরি করেন। অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত। অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কীভাবে ছড়িয়েছিল। সাইমন ড্রিং এর মুক্তিযুদ্ধে অবদান