যুক্তফ্রন্টঃ
যুক্তফ্রন্ট ছিল পূর্ব বাংলার গন মানুষের আশা-আকাঙ্খা বাস্তবায়নের প্রতীক। ১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক নির্বাচনকে কেন্দ্র করে পূর্ব-বাংলার রাজনৈতিক দলগুলো একত্রে জোট গঠন করে। এই জোটকে যুক্তফ্রন্ট বলা হয়।
যুক্তফ্রন্ট কেন গঠিত হয়েছিল
১৯৪৭ এ ভারত ও পাকিস্তান নামক দুটি আলাদা স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। পূর্ব বাংলা পশ্চিম পাকিস্তানের একটি প্রদেশে অন্তর্ভূক্ত হয়। স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা হলেও পূর্ব বাংলা পরাধীনতার বেড়াজলে আটকে যায়। পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী পূর্ব বাংলাকে রাজনৈতিক অধিকার থেকে আড়াল করে রাখার প্রচেষ্টা চালাতে লাগল। ১৯৫১ সালে পূর্ব বাংলার প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচন হওয়ার কথা থাকলেও তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। কয়েক ধাপে নির্বাচন পিছিয়ে দেয়া হয়। যা ক্ষমতাসীন মুসলিম লীগ সরকারের ক্ষমতালোভের প্রমানক হিসেবে প্রতীয়মান হয়। বায়ান্ন সালে উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা করার পায়তারা করা হয়। পূর্ব বাংলার জনগনের আন্দোলনের কারনে পশ্চিম পাকিস্তান সরকার তা থেকে পিছপা হয়ে বাংলাকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে মানতে বাধ্য হয়। পশ্চিমের সরকার কর্তৃক পূর্বের শিল্প ধ্বংস এবং অর্থনৈতিক বৈষম্য ও রাজনৈতিক বঞ্চনার কারনে পূর্ব বাংলার আঞ্চলিক রাজনৈতিক দলগুলো একত্রিত হয়। ১৯৫৩ সালের ৪ ডিসেম্বর মাওলানা ভাসানির আওয়ামী মুসলিম লীগ, শেরে বাংলা ফজলুল হকের কৃষক শ্রমিক পার্টি, হাজী দানেশের বাম গনতান্ত্রিক দল, মাহমুদ আলী সিলেটির গনতান্ত্রিক দল ও মাওলানা আতাহার আলীর নেজামে ইসলামির সমন্বয়ে যুক্তফ্রন্ট গঠিত হয়।
আরও পড়ুন: মুজিবনগর সরকারের চারটি অবদান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সংগীত শিল্পীদের অবদান পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার কে আবিষ্কার করেন? পাহাড়পুর সম্পর্কে বিস্তারিত। সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের ১০ টি উপায় ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম।
যুক্তফ্রন্টের ২১ দফা নির্বাচনী ইশতেহারঃ
১৯৫৪ সালের প্রাদেশিক পরিষদ নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট ২১ দফা বিশিষ্ট নির্বাচনী ইশতেহার প্রচার করে।
দফা | বিবরন |
১ | বাংলাকে অন্যতম রাষ্ট্র ভাষা |
২ | জমিদারি প্রথা উচ্ছেদ এবং ভূমিহীন কৃষকদের মাঝে জমি বিতরন |
৩ | পাট ব্যবসাকে জাতীয়করন করে পূর্ববঙ্গ সরকারের অধীনস্ত করা |
৪ | কৃষিতে সমবায় প্রথা চালু এবং কুটির শিল্পের উন্নয়নে সরকারি সাহায্য |
৫ | পূর্ববঙ্গকে লবন শিল্পে স্বয়ংসম্পূর্ণ করা |
৬ | কারিগর শ্রেনীর কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করা |
৭ | খাল খনন এবং সেচ ব্যবস্থার সংস্কার |
৮ | কৃষি ও শিল্প খাতের আধনিকীকরনে এবং শ্রমিকদের বেতন মান বাড়ানো |
৯ | অবৈতনিক বাধ্যতামূলক প্রাথমিক শিক্ষার প্রবর্তন এবং শিক্ষকদের বেতন বাড়ানো হবে |
১০ | শিক্ষাব্যবস্থার সংস্কার করা |
১১ | ঢাকা ও রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কে অধিক স্বায়ত্ত্বশাসন |
১২ | শাসনব্যয় কমানো |
১৩ | দূর্নীতি ও স্বজনপ্রীতি বন্ধ করা |
১৪ | নাগরিকের হয়রানিমূলক আইন বাতিল এবং সংবাদপত্রের স্বাধীনতা থাকবে |
১৫ | স্বাধীন বিচারবিভাগ প্রতিষ্ঠা |
১৬ | বর্ধমান হাউসকে বাংলা একাডেমিতে রূপান্তর |
১৭ | ভাষা আন্দোলনে ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ এবং শহীদ মিনার নির্মান |
১৮ | একুশে ফেব্রুয়ারিকে শহীদ দিবস এবং সরকারি ছুটির দিন ঘোষনা করা |
১৯ | প্রতিরক্ষ, পররাষ্ট্র ও মুদ্রানীতি বাদে অন্য সকল বিষয় পূর্ববঙ্গের স্বায়ত্তশাসন |
২০ | স্বাধীন ও নিরপেক্ষ নির্বাচন কমিশনের অধীনে সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন ব্যবস্থা করতে হবে। |
২১ | আসন শূন্য হলে তিন মাসের মধ্যে উপনির্বাচনের ব্যবস্থা করা |