সুপ্রিয় দর্শক, আপনাকে স্বাগতম। সুশাসনের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি শীর্ষক আর্টিকেলে সুশাসন কি, সুশাসনের বৈশিষ্ট্য ও সুশাসনের গুরুত্ব সম্পর্কে স্পষ্ট, সাবলিল ও তথ্য ভিত্তিক প্রাঞ্জল লেখা উপস্থাপনের চেষ্টা করেছি। আশা করি আপনার পাঠের উদ্দেশ্য হাসিল হবে। আর্টিকেলটি ধৈর্য্য ও মনোযোগ সহকারে পড়ার অনুরোধ রইল।
সুশাসনের বৈশিষ্ট্য গুলো কি কি জানার আগে সুশাসন কি সে বিষয়ে অবশ্যই জানা উচিত। তো চলুন শুরু করা যাক।
সুশাসন কী
সুশাসনের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো Good Governance. যার বাংলা প্রতিশব্দ হলো ভালো বা সুন্দর শাসনব্যবস্থা। সুশাসন একটিমাত্র শব্দ হলেও এক কথায় সুশাসনকে বিশ্লেষন করা সম্ভব নয়। কারণ সুশাসন শব্দের মধ্যে বহুমাত্রিক ধারণা বিদ্যমান।
সুশাসন হচ্ছে কিছু বাস্তব ও গ্রহনযোগ্য পদক্ষেপের সম্মিলন যার ফলে সেই রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থা স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হয় এবং রাষ্ট্রে নাগরিকের অধিকার রক্ষিত হয়, আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। টেকসই উন্নয়ন, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, অংশীজনের অংশগ্রহন, স্বাধীন বিচার বিভাগ প্রতিষ্ঠা লাভ করে। রাষ্ট্র ও গণ জীবনের সর্ব স্তরে নাগরিকের মত প্রকাশের স্বাধীনতা থাকে। সেই রাষ্ট্রে স্বাধীন বিচার বিভাগ নিশ্চিত হয়। রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে দূর্নীতি ও স্বেচ্ছাচারিতা লোপ পায়। সুশাসনের ফলে রাষ্ট্র কল্যান রাষ্ট্রে পরিণত হয়।সুশাসনের ফলে রাজনৈতিক, সামাজিক, অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হয়।
সুশাসনের সংজ্ঞা নির্ধারণ করতে পারি এভাবে,
সুশাসন হচ্ছে দক্ষ, অংশগ্রহনমূলক, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক শাসন ব্যবস্থা। আইনের শাসন ও জবাবদিহিতা সুশাসনের মূলভিত্তি। আইনের শাসন ও জবাবদিহিতার মাধ্যমে সুশাসন প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
অর্থাৎ সুশাসন হচ্ছে সুন্দর শাসন যেখানে ক্ষমতার সুষ্ঠু প্রয়োগ ঘটে। নাগরিকের অধিকার নিশ্চিত হয়।
বিশ্বব্যাংক ১৯৮৯ সালে সুশাসনের ধারনার প্রচলন করে। সুশাাসন বা গুড গর্ভরনেন্সকে বিশ্বব্যাংকের প্রেসক্রিপশন বলা হয়ে থাকে।
সাইবার অপরাধ গুলো কি কি
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের ১০ টি উপায়
সুশাসনের বৈশিষ্ট্যঃ
সুশাসনের বৈশিষ্ট্যগুলো নিচে ধারাবাহিকভাবে উল্লেখ করা হলো-
স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতাঃ
সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য যে সকল উপাদানকে প্রধানতম হাতিয়ার মনে করা হয় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা সেগুলোর মধ্যে অন্যতম।
রাষ্ট্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা প্রতিষ্ঠিত থাকলে দূর্নীতি, স্বজনপ্রীতি থাকে না। শাসক শ্রেনী তাদের কাজের প্রতি আরও যত্নশীল থাকে। শাসক স্বৈরাচারী হতে পারে না। কোন রাষ্ট্রে কতটুকু সুশাসন প্রতিষ্ঠিত রয়েছে তা বিবেচনা করা হয় সে রাষ্ট্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতার মাত্রা কত সে বিচারে। স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা হচ্ছে সুশাসনের মূল বিষয়।
আইনের শাসনঃ
কেউই আইনের ঊর্ধ্বে নয়। রাষ্ট্রের সকল নাগরিক এমনকি আইনপ্রণেতা এবং রাষ্ট্রনায়কও আইন মানতে বাধ্য। আইন সকলের জন্য সমান। বিশ্বব্যাংকের ১৯৯৪ সালের সুশাসনের সংজ্ঞায় আইনের শাসনের বিষয়টি সামনে আসে। আইনের শাসন সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
অংশগ্রহণঃ
রাষ্ট্রের যে কোন স্তরে যে কোন সিদ্ধান্ত গ্রহণে নাগরিকদের অংশগ্রহণ থাকা উচিত। সেই অংশগ্রহন বিভিন্নভাবে হতে পারে। যেমন, সুপারিশ কিংবা মতামত প্রদান করে। রাষ্ট্র ও গণজীবনের সকল ক্ষেত্রে ধর্ম-বর্ণ-গোত্র, নারী-পুরুষ সকল নাগরিকের অংশগ্রহনের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে। কোন বৈষম্য থাকা উচিত না। অংশগ্রহণ সুশাসনের বৈশিষ্ট্য।
সাইমন ড্রিং এর পরিচয়।
সাইমন ড্রিং এর মুক্তিযুদ্ধে অবদান
স্বচ্ছতাঃ
স্বচ্ছতা মানে কোন কিছু স্পষ্ট বা পরিষ্কার । যেমন, ঘরের জানালা দিয়ে বাইরের দৃশ্য পরিষ্কার দেখা। স্বচ্ছতা সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। স্বচ্ছতা মূলত সততারই সমার্থক। কোন কাজ আইন মেনে সুষ্ঠুভাবে করাই স্বচ্ছতা। সরকারের কার্যাবলি ও তথ্য সম্পর্কে নাগরিকদের জানার অধিকার নিশ্চিত করাই হচ্ছে স্বচ্ছতা। স্বচ্ছতা হচ্ছে সুশাসনের হাতিয়ার। রাষ্ট্রে সকল স্তরে স্বচ্ছতা প্রতিষ্ঠিত হলে সে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
নিরপেক্ষতা ও দায়িত্বশীলতাঃ
নিরপেক্ষতা হলো ন্যায়বিচারের পূর্বশর্ত। সমাজ ও রাষ্ট্রের সকল সিদ্ধান্তে নিরপেক্ষতা বজায় রাখতে হবে। বিবদমান কোন পক্ষ বা গোষ্ঠীর পক্ষে সিদ্ধান্ত না নিয়ে নিরপেক্ষ সিদ্ধান্ত বাস্তবায়ন করতে হবে। এতে সুশাসনের পথ সুগম হয়। যেমন, নিরপেক্ষ নির্বাচন। আর দায়িত্বশীলতা না থাকলে কোন কাজ সঠিকভাবে সম্পাদন করা সম্ভব নয়। তাই নিরপেক্ষতা সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য।
জনপ্রশাসনের উৎকর্ষতা ও বিকেন্দ্রীকরনঃ
উৎকর্ষতা সাধন বলতে বুঝায় দক্ষতা শাণিতকরন, নিজের গুনাবলিকে আরও উন্নত পর্যায়ে উন্নীত করন। জনপ্রশাসনের দায়িত্বশীল ব্যক্তিবর্গের দক্ষতা ও মান উন্নয়ন ঘটলে রাষ্ট্রের শাসন আরও অধিক কল্যানকর ও জনহিতকর হয়ে ওঠে। সেই সাথে বিকেন্দ্রীকরনের মাধ্যমে জনগনের দোরগোড়ায় সেবা পৌছে যায়। তাই জনপ্রশাসনের উৎকর্ষতা ও বিকেন্দ্রীকরন সুশাসনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
যুক্তফ্রন্ট কেন গঠিত হয়েছিল
১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্ট কত দফা ঘোষণা করে এবং দফাগুলো কি কি। বিস্তারিত।
ন্যায়বিচারঃ
ন্যায় একটি সর্বজনীন কাম্য। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সমাজ ও রাষ্ট্রে ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা গুরুত্বপূর্ণ। সমাজে শান্তি ও নিরাপত্তায় ন্যায়বিচার প্রধান হাতিয়ার। তাই ন্যায়বিচার সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
স্থায়িত্বঃ
পরিবেশের টেকসই উন্নয়ন সুশাসনের বৈশিষ্ট্য।
বিচার বিভাগের স্বাধীনতাঃ
স্বাধীন বিচার বিভাগ সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তািই স্বাধীন বিচার বিভাগ সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য।
সুশীল সমাজঃ
সুশীল সমাজ রাষ্ট্রের একটি গুরুত্বপূর্ণ গোষ্ঠী বা সম্প্রদায় যারা নাগরিকের অধিকার নিয়ে সর্বদা সোচ্চার থাকে বাকস্বাধীনতা ও নাগরিক অধিকার নিয়ে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। তাই সুশীল সমাজ সুশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ঠ্য।
তথ্য অধিকারঃ
সুশাসন প্রতিষ্ঠায় তথ্যকে সহজপ্রাপ্য করতে হবে। বাংলাদেশে তথ্য অধিকার আইনের মাধ্যমে তথ্য সহজলভ্য করা হয়েছে। তাই তথ্য অধিকার সুশাসনের বৈশিষ্ট্য।
গণ মাধ্যমের স্বাধীনতাঃ
স্বাধীন গণমাধ্যম সুশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য।
সুশাসনের আরো কতিপয় বৈশিষ্ট্য নিম্নরূপঃ
- নৈতিক মূল্যবোধ
- মানবিধিকারের প্রতি সম্মান
- প্রশাসনিক দক্ষতা ও নিরপেক্ষতা।
- জনস্বার্থকে প্রাধান্য দেয়া
- মেধা ভিত্তিক সরকারি চাকুরী
- লিঙ্গ বৈষম্যের প্রতি অবসান
- সরকারের বৈধতা
- রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা
- সরকারের বৈধতা
মুক্তিযুদ্ধে জর্জ হ্যারিসনের অবদান।
মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থীরা কোথায় এবং কিভাবে আশ্রয় পেয়েছিল।
সুশাসনের গুরুত্বঃ
সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিকসহ রাষ্ট্রীয় সকল ক্ষেত্রে উন্নয়নের জন্য সুশাসনের গুরুত্ব রয়েছে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে রাষ্ট্র তার কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করে। টেকসই উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন সুশাসন। সুশাসন রাষ্ট্রে ন্যায় বিচার কায়েমে অনুঘটক হিসেবে কাজ করে। সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হলে রাষ্ট্রে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। দক্ষতা ও জবাবদিহিতা, মানবাধিকার, ন্যায়ভিত্তিক সমাজ, লিঙ্গ বৈষম্যের অবসান, মেধা ভিত্তিক সরকারি চাকুরী নিশ্চিত হয়। নারীর অধিকার, মত প্রকাশের স্বাধীনতা সমাজে প্রতিষ্ঠা লাভ করে।
আরও পড়ুন: মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের ভূমিকা বিস্তারিত। মুক্তিযুদ্ধে বীরত্বসূচক উপাধি কয়টি ও কি কি মুজিবনগর সরকারের চারটি অবদান ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম। জাতীয় চার নেতার নাম ও পদবী