সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের ১০ টি উপায়

সাইবার অপরাধঃ

বর্তমানে তথ্য প্রযুক্তির মাধ্যমে অপরাধের মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।  এটি একটি বর্ডারলেস অপরাধ প্রক্রিয়া। তাই সাইবার অপরাধ বর্তমানে একটি জটিল রূপ ধারন করেছে। বাংলাদেশ সরকার তথ্য প্রযক্তি আইন ২০০৬ প্রবর্তন করেছে। 

সাইবার ক্রাইম বা সাইবার অপরাধ মূলত কম্পিউার রিলেটেড অপরাধ। তথ্য প্রযুক্তি ও ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে যে অপরাধ সংগঠিত হয় তাই সাইবার অপরাধ। কপিরাইট, হ্যাকিং, স্প্যামিং, পর্ণগ্রাফি সাইবার অপরাধের অন্তর্ভূক্ত। কারও ফেসবুক আইডি হ্যাক করে গুজব কিংবা অশ্লীলতা ছড়ানো হচ্ছে আবার কারও ওয়েবসাইট হ্যাক করে নিচ্ছে। ব্যক্তিগত তথ্য চুরি হয়ে যাচ্ছে। ক্রেডিট ও ডেবিট কার্ডের পাসওয়ার্ড চুরি করে অর্থ আত্মসাৎ সহ অনলাইন জগতে প্রতিনিয়ত হাজারো অপরাধ সংঘটিত হচ্ছে। এসবই সাইবার অপরাধ। 

যারা কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে কম দক্ষ তারাই সাইবার হামলার শিকার হচ্ছে। এজন্য কম্পিউটার ও ইন্টারনেট ব্যবহারে আমাদের সচেতনতা দরকার। 

সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের ১০টি উপায়ঃ

শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহারঃ

সাইবার নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে আমাদের শক্তিশালী পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা উচিত। অনলাইন ইউজারদের প্রতিনিয়ত অনেক সাইটে প্রবেশ করতে হয়। সেই সাইটগুলো আবার সাইন ইন অপশন দিয়ে রেখেছে। সেক্ষেত্রে প্রত্যেক সাইটের জন্য একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। প্রতি সাইটের জন্য আলাদা পাসওয়ার্ড তৈরি করুন। প্রয়োজনে পাসওয়ার্ডগুলো ডায়েরিতে লিখে রাখুন। 

পাসওয়ার্ড ব্যবহারে যে বিষয়গুলো মাথায় রাখতে হবে

  • অনুমানযোগ্য পাসওয়ার্ড যেমন, পরিবারের সদস্যের নাম, জন্ম সাল, পাসের সন, রোল নম্বর এসব তথ্য পাসওয়ার্ডে ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। 
  • যথাসম্ভব বড় পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। পাসওয়ার্ড সর্বনিম্ন ৮ ডিজিটের হওয়া উচিত। 
  • পাসওয়ার্ডে আপার কেস, লোয়ার কেস, নাম্বার ও প্রতীক ব্যবহার করুন। যেমন, (!9jaFAAGaPOI984098$#q!@#fosd)
  • পাসওয়ার্ডের সুরক্ষার জন্য মাঝে মাঝে পাসওয়ার্ড পরিবর্তন আপডেট করুন।
  • অনেকেই পাসওয়ার্ড সংরক্ষনে গুগুল পাসওয়ার্ড ম্যানেজার ব্যবহার করে থাকি। এটা থেকে যথাসম্ভব বিরত থাকি। পাসওয়ার্ড ব্যক্তিগত ডায়েরিতে লিখে রাখাই ভালো।
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের ১০ টি উপায়
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের ১০ টি উপায়

অ্যান্টি-ভাইরাস সফটওয়্যারের ব্যবহারঃ

প্রাণীদেহের জন্য যেমন ক্ষতিকারক ভাইরাস রয়েছে তেমনি কম্পিউটারেরর ও ভাইরাস রয়েছে। এই ভাইরাসগুলো কম্পিউটারের প্রোগ্রামের ক্ষতি করে থাকে।  কম্পিউটারে ভাইরাস VIRUS এর ফুল মিনিং Vital Information Resources Under Seize যার মানে হলো, আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্যগুলো বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ কম্পিউটার ভাইরাস হলো এক ধরনের ক্ষতিকারক প্রোগ্রাম যা কম্পিউটারের প্রোগ্রাম নষ্ট করে দেয়। এসব ভাইরাসের বিরুদ্ধে কম্পিউটারকে নিরাপত্তা দিতে অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করা হয়। অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার  ভাইরাসের বিরুদ্ধে আপনার ডিভাইসকে নিরাপত্তা দিয়ে থাকে। প্রতিকারের চেয়ে প্রতিরোধ উত্তম। তাই ভাইরাসে আক্রান্ত হবার আগেই অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ইনস্টল করুন। 

কয়েকটি অ্যান্টি ভাইরাস সফটওয়্যার এর নামঃ

  1. Norton
  2. Kaspersky
  3. McAfee
  4. AVG
  5. Bitdefender
  6. Avast
  7. Avira
  8. Cobra (বাংলাদেশি)
  9. Panda
  10. Comodo
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের ১০ টি উপায়
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের ১০ টি উপায়

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ব্যক্তিগত তথ্য দেয়া থেকে বিরত থাকুনঃ

বর্তমান তথ্য প্রযুক্তির যুগে সোশাল মিডিয়া আমাদের জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে দাঁড়িয়েছে। সোশাল মিডিয়ার কল্যানে মুহূর্তেই বিশ্বে যে কোন প্রান্তের ঘটনাবলি যেমন জানতে পারছি তেমনি পারিবারিক ও ব্যক্তিগত বিষয় আমরা বন্ধুদের সাথে শেয়ার করে থাকি। আবেগ তাড়িত হয়ে জন্ম তারিখ, ফোন নম্বর, লোকেশন, পরিবারের ছবি সব কিছু শেয়ার করে থাকি। গ্লোবাল ভিলেজ এর যুগেও আমাদের তথ্যের গোপনীয়তা নিয়ন্ত্রন করতে হবে। সম্প্রতি ফেসবুকের তথ্য ফাঁস হয়ে একের পর এক সাইবার অপরাধ ঘটেছে। কোটি কোটি অর্থ লোপাট হচ্ছে। স্ক্যামার ও হ্যাকাররা আপনার এই তথ্যগুলোকে কাজে লাগিয়ে আপনার অনেক গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্ট হ্যাক করে থাকে। এতে আপনার আর্থিক ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে। আপনার অ্যাকাউন্টের অ্যাক্সেস নিয়ে গুজব কিংবা পর্ণগ্রাফির মতো বিষয় ছড়িয়ে দিতে পারে। আপনার পরিবারের শেয়ার করা ছবি এআই টুলের মাধ্যমে এডিট করে পর্ণগ্রাীফি ওয়েব সাইটে শেয়ার করতে পারে। তাই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সংবেদনশীল তথ্য শেয়ার থেকে বিরত থাকুন। 

টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশনঃ

আমরা প্রয়োজনের তাগিদে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ও ওয়েবসাইট ব্যবহার করে থাকি।  এক্ষেত্রে ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন করতে হয়। কিন্তু বর্তমানে সাইবার অপরাধের মাত্রা বেড়ে যাওয়ায় অ্যাকাউন্ট সুরক্ষিত রাখার জন্য টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন (Two Factor Authentication) সিস্টেম চালু রাখা ভালো। এটি আপনার অ্যাকাউন্টের অতিরিক্ত সুরক্ষা সংযুক্ত করে। টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন চালু থাকলে ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দেয়ার পর আপনার ইমেইল বা মোবাইল নম্বরে একটি কোড যাবে। সেই কোডটি ইনপুট করার পর অ্যাকাউন্টে লগইন করা সম্ভব। ২০১৯ সালে মাইক্রোসফটের জরিপ অনুযায়ী, যে সকল অ্যাকাউন্ট হ্যাকারের দ্বারা ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সেগুলোর ৯৯% অ্যাকাউন্টের টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সিস্টেম চালু ছিল না। তাই আপনার সাইটের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার জন্য আজই টু ফ্যাক্টর অথেনটিকেশন সিস্টেম আজই চালু করুন। 

সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের ১০ টি উপায়
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের ১০ টি উপায়

পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারে সতর্ক থাকুন

শপিংমল, ক্যাফে, রেস্তোরাঁ, বিমানবন্দরের মতো জনাকীর্ণ জায়গায় ফ্রি ওয়াইফাই সরবরাহ থাকে। পাসওয়ার্ড ছাড়াই ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত হওয়া যায়। আমরা অনেকেই বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মোবাইলে গেম খেলা এমনকি একসাথে অনেকগুলো মুভি ডাউনলোড করে থাকি। কিন্তু বাস্তব সত্য হচ্ছে এরকম পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহারে আমাদের সতর্কতা জরুরী। ফ্রি ওয়াইফাই এ নিরাপত্তা ঝুঁকি রয়েছে। হ্যাকাররা আপনার গুরুত্বপূর্ণ সকল তথ্য হাতিয়ে নিয়ে আপনার অ্যাকাউন্টে অ্যাক্সেস করে আপনার সকল সাইটের নিয়ন্ত্রণ নিতে পারে। আপনার সাইটে ভাইরাস ছড়াতে পারে। তাই পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে মোবাইল ব্যাংকিং ও আপনার গুরুত্বপূর্ণ অ্যাকাউন্টে লগইন করা থেকে বিরত থাকুন।

 পিডিএফ ফাইল ডাউনলোডে সতর্কতা

সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের ১০ টি উপায়

পিডিএফ ফাইলের সাথে আমরা সকলেই কমবেশি পরিচিত। বিভিন্ন সময় আমরা বিভিন্ন প্রয়োজনে পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করে থাকি। পিডিএফ ফাইলের সাথে ভাইরাস ছড়ানো হচ্ছে। হ্যাকার অনেক আকর্ষনীয় অফার দেখিয়ে মেইল পাঠায় যা ওপেন করার সাথেই হ্যাকার আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হাতিয়ে নিতে সক্ষম হয়। অথবা সেই লিংকে প্রবেশ করার সাথেই আপনার ডিভাইসটি ভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। বিভিন্ন সময় ব্যাংক ম্যানেজারের নামে আপনাকে মেইল করে পিডিএফ ফাইলটি ওপেন করার জন্য আপনার কাছ থেকে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য চেয়ে থাকে। সেক্ষেত্রে অবশ্যই মেইল অ্যাড্রেসটি ভালোভাবে চেক করতে হবে। অনেক সময় আমরা প্রয়োজনে ইন্টারনেট থেকে পিডিএফ ফাইল ডাউনলোড করি। এক্ষেত্রে খেয়াল রাখতে হবে আমরা যেখান থেকে ফাইল ডাউনলোড করছি সেই ওয়েবসাইটটি বিশ্বস্ত কিনা। কারন হ্যাকাররা বিভিন্ন ভাবে আপনাকে বিপদে ফেলার জন্য পিডিএফ ফাইল ব্যবহার করে। তাই পিডিএফ ফাইল ডাউনলোডে আপনাকে সচেতন হতে হবে। 

সন্দেহ জনক ইমেইল ও লিংক থেকে সতর্ক থাকুনঃ

হ্যাকার ও স্ক্যামাররা ইমেইলকে তাদের শক্তিশালী অস্ত্র হিসেবে ব্যবহার করে থাকে। আপনাকে নিরাপদ থাকার জন্য সন্দেহজনক ইমেইল ও লিংক থেকে সতর্ক থাকতে হবে। আপনি একটি অফিসে চাকুরী করেন। আপনার অফিসের বস আপনাকে গুরুত্বপূর্ণ একটি ইমেইল পাঠিয়েছে। আপনাকে মেইলের প্রাপ্তিস্বীকার দিতে হবে। অথবা আপনি বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস, পরীক্ষা সংক্রান্ত একটি জরুরী তথ্য আপনার বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ আপনাকে মেইল করেছে। আপনি অবশ্যই মেইল দেখবেন। আপনার ব্যাংকের ম্যানেজার আপনাকে ইমেইল করতে পারে। অথবা আপনার গ্রুপ থেকে  একটি গুরুত্বপূর্ণ লিংক পাঠিয়েছে যার মাধ্যমে আপনাকে কোন প্লাটফর্মে লাইভে যুক্ত হতে বলছে। 

এরকম বিভিন্নভাবে হ্যাকার আপনাকে ফাঁদে ফেলতে পারে। আপনি সন্দেহজনক ইমেইল ও লিংক অবশ্যই পরিহার করুন। আপনি মেইল অ্যাড্রেসটি ভালোভাবে পর্যবেক্ষণ করে তবেই ওপেন করুন। 

ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্ক থাকুনঃ

ইন্টারনেট ব্রাউজ করার সময় সতর্ক থাকুন। অনিরাপদ ওয়েবসাইটে ভিজিট করা থেকে বিরত থাকুন। ইন্টারনেটে কিছু ফিশিং ওয়েবসাইট আছে। যেগুলো ঢোকার সাথে  হ্যাকার আপনার সব তথ্য হাতিয়ে নেয়। সে জন্য ইন্টারনেট ব্যবহারে আপনাকে সতর্ক হতে হবে। ইন্টারনেটে অনেক পিডিএফ ও লিংক থাকে যেগুলো ক্লিক করলেই হ্যাকার আপনার ডেটা অ্যাক্সেস পেয়ে যায়। অনেক ওয়েবসাইটে আবার লগইন করতে হয়। আপনি লগইন দিলেই সেই ওয়েবসাইটে ঢুকতে পারবেন অন্যথায় নয়। যখনই ইউজার আইডি ও পাসওয়ার্ড দিয়ে লগইন দিবেন হ্যাকার আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য হ্যাক করে আপনার অ্যাকাউন্ট জব্দ করে আপনার কাছে টাকা দাবি করতে পারে। আপনার ব্যাংক অ্যাকাউন্ট ইনফেরমেশন জানার মাধ্যমে আপনার অ্যাকাউন্ট হতে টাকা সরিয়ে নিতে পারে। তাই ইন্টারনেট ব্যবহারে সতর্ক থাকুন। 

সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের ১০ টি উপায়
সাইবার অপরাধ প্রতিরোধের ১০ টি উপায়

ব্যবহৃত সফটওয়্যার আপডেট রাখুনঃ

কম্পিউটারে কাজ করার সময় কম্পিউটার স্ক্রিনে আপডেট নটিফিকেশন পপ আপ চলে আসে। আমরা অনেক সময় রিমাইন্ড মি অপশন ক্লিক করে কাজ চালিয়ে যাই। সেটা ঠিক নয়। আপনার ডিভাইস কিংবা প্রোগ্রাম নিয়মিত আপডেট করুন। অটো আপডেট অপশন থাকলে তা চালু করুন। আপনার ডিভাইসটি আপডেট করে নিন। দীর্ঘদিন যদি আপডেট না করেন তাহলে সফটওয়্যার অনেক  আগে তৈরি হয়ে থাকায় হ্যাকাররা তারা প্রোগ্রামিং আয়ত্ত্ব করে ভাইরাস দ্বারা অ্যাটাক করতে পারে। তাই সফটওয়্যারটি মাঝে মাঝে আপডেট করলে হ্যাকারদের হাত থেকে সুরক্ষা নিশ্চিত হয়। আপনার ডিভাইসে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থাকতে পারে। হ্যাকার ডেটা এনক্রিপ্ট করে আপনার সেই তথ্য হাতিয়ে নিয়ে অপরাধ কাজে জড়িত হতে পারে। তাই আপনার সফটওয়্যার আপডেট রাখা উচিত।

 

Scroll to Top
Verified by MonsterInsights