মুক্তিযুদ্ধের কারন ও প্রেক্ষাপটঃ
পাক-ভারত উপমহাদেশ বৃটিশ দখলমুক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি স্বাধীন রাষ্ট্রের উদ্ভব হয়। আমাদের বর্তমান বাংলাদেশ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের অন্তর্ভুক্ত হয়। স্বাধীন পাকিস্তান রাষ্ট্র পতিষ্ঠিত হলেও বাংলাদেশ আবার পরধীনতার শৃঙ্খলে আবদ্ধ হয়। সমাজ, সংস্কৃতি, ভৌগোলিক ও ভাষাগত সবদিক থেকেই পূর্ব পাকিস্তান হতে সম্পূর্ণ ভিন্ন ছিল পশ্চিম পাকিস্তান। পূর্ব পাকিস্তানের সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের মুখের ভাষা ছিল বাংলা। অথচ বাঙালী জনগোষ্ঠীর ওপর উর্দুকে রাষ্ট্রভাষা হিসেবে চাপিয়ে দেয়া হয়। কিন্তু বাঙালি জনগোষ্ঠী এর তীব্র প্রতিবাদের কারনে তা আর সম্ভব হয় নি। এছাড়াও অর্থনৈতিক, সামরিক, রাজনৈতিক সবদিক থেকে পূর্ব পাকিস্তানের সাথে পশ্চিম পাকিস্তানের বৈষম্য যখন চরমে পৌছে যায় তখন বাধ্য হয়ে পূর্ব পাকিস্তান স্বায়ত্ত্বশাসনের দাবিতে স্বাধীনতা যুদ্ধে ঝাপিয়ে পড়ে। এদিকে ১৯৭০ এর জাতীয় ও প্রাদেশিক নির্বাচনে আওয়ামীলীগ নিরঙ্কুশভাবে বিজয়লাভ করলেও পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠী আওয়ামীলীগের হাতে ক্ষমতা হস্তান্তর না করে বরং বাঙালিদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন জাতীয় ও আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র করতে থাকে। যার ফলশ্রুতিতে শুরু হয় মক্তিযুদ্ধ।
মুক্তিযুদ্ধ সম্পর্কিত প্রশ্নাবলিঃ
প্রশ্নঃ মুক্তিযুদ্ধে সর্বশেষ শত্রুমুক্ত অঞ্চল কোনটি ছিল?
ঢাকার মিরপুর।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশকে প্রথম স্বীকৃতি দেন কে?
ভুটান, ১৯৭১ সালের ৬ ডিসেম্বর বিশ্বের ১ম দেশ হিসেবে ভুটান স্বাধীন বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
প্রশ্নঃ ১৯৭১ সালের যুদ্ধে বাংলাদেশে কতজন নিহত হয়?
প্রায় ৩০ (ত্রিশ ) লক্ষ।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের সর্বপ্রথম শত্রুমুক্ত জেলা কোনটি?
যশোর।
প্রশ্নঃ ১ ডিসেম্বর মুক্তিযোদ্ধা দিবস কেন?
১৯৭১ সালের ১ ডিসেম্বর ভারতের প্রধানমন্ত্রী ইন্দিরা গান্ধী বাংলাদেশ থেকে পাকিস্তান সেনা অপসারনের জন্য সর্বাত্মক যুদ্ধের ডাক দেন। তাই এই দিনটিকে মুক্তিযুদ্ধ দিবস ঘোষনা করা হয়।
প্রশ্নঃ পাকিস্তান কি বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দিয়েছে?
১৯৭৪ সাালের ২২ শে ফেব্রুয়ারি পাকিস্তান বাংলাদেশকে স্বীকৃতি দেয়।
প্রশ্নঃ পাকিস্তান কত সালে স্বাধীন হয়েছিল?
১৯৪৭ সালের ১৪ই আগস্ট।
প্রশ্নঃ মুক্তিযুদ্ধের প্রথম শহীদ কে ছিলেন?
শংকু মজুমদার।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের স্থায়িত্ব কত ছিল?
১৯৭১ সালের ২৬ শে মার্চ হতে ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর পর্যন্ত।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশে মুক্তিযোদ্ধার সংখ্যা কত?
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রনালয়ের তথ্য অনুযায়ী প্রায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী কে ছিলেন?
রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের রসায়নের অধ্যাপক ড. সামসুজ্জোহা বাংলাদেশের প্রথম শহীদ বুদ্ধিজীবী। ১৯৬৯ সালের গণ-অভ্যূত্থানে তিনি শহীদ হন।
মুক্তিযুদ্ধের তেলিয়াপাড়া রণকৌশলঃ
মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে গেলে ১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল জেনারেল এম এ জি ওসমানি ২৭ জন সেনা অফিসারসহ তেলিয়াপাড়া চা বাগানের ম্যানেজার বাংলোয় মিলিত হন এবং দেশকে স্বাধীন করার দৃপ্ত শপথ নেন। যুদ্ধের কৌশল হিসেবে বাংলাদেশের রণাঙ্গণকে ১১টি সেক্টর ও ৩টি ব্রিগেডে বিভক্ত করা হয়।
বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধের ব্রিগেড ফোর্সঃ
শুধুমাত্র গেরিলা যুদ্ধ করে পাকিস্তানি বাহিনীকে পরাজিত করা সম্ভব নয়। তাই মুক্তিযুদ্ধে বিজয় অর্জনের জন্য ব্রিগেড ফোর্স গঠন করা হয়। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে তিনটি ব্রিগেড ফোর্স গঠন করা হয়। সেগুলো “জেড ফোর্স”, “কে ফোর্স” এবং “এস ফোর্স”।
জেড ফোর্সঃ
ব্রিগেড কমান্ডার মেজর জিয়াউর রহমান এর নামের প্রথম অক্ষর অনুসারে এই ফোর্সের নামকরন জেড ফোর্স করা হয়। মেঘালয়ের দুর্গম পাহাড়ি এলাকা তুরা তে জেড ফোর্স তাদের প্রশিক্ষণ পরিচালনা করে। ১ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ৩য় ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট, ৮ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ২য় ফিল্ড আর্টিলারি ব্যাটারি কে এই জেড ফোর্সে অন্তর্ভুক্ত করা হয়।
কে ফোর্সঃ
মেজর খালেদ মোশারফ কে কমান্ডার করে কে ফোর্স গঠন করা হয়। এই ফোর্সের সদর দপ্তর আগরতলা। ৪র্থ, ৯ম ও ১০ম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্ট এবং ১ম ফিল্ড আর্টিলারি ব্যাটারি এই “কে ফোর্সর” অন্তর্ভুক্ত।
এস ফোর্সঃ
মেজর কে এম শফিউল্লাহর নেতৃতে কে ফোর্স গঠন করা হয়। এই ব্রিগেডটির সদর দপ্তর ফটিকছড়াতে। ২য় এবং ১১ তম ইস্ট বেঙ্গল রেজিমেন্টের সমন্বয়ে এস ফোর্স গঠিত।
আরও পড়ুন: মুজিবনগর সরকারের সদস্য ছিলেন কে কে এ সম্পর্কে বিস্তারিত। অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কীভাবে ছড়িয়েছিল। সাইমন ড্রিং এর মুক্তিযুদ্ধে অবদান যুক্তফ্রন্ট কেন গঠিত হয়েছিল
প্রশ্নঃ তেলিয়াপাড়া রণকৌশল কত তারিখে হয়েছিল?
১৯৭১ সালের ৪ এপ্রিল।
মুক্তিযুদ্ধের ১১ নং সেক্টরের নাম কি
কিশোরগঞ্জ বাদে টাঙ্গাইল ও ময়মনসিংহ বিভাগ ১১ নং সেক্টর। ১১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার ছিলে প্রথমে মেজর জিয়াউর রহমান, তারপর মেজর আবু তাহের ও পরবর্তীতে উইং কমান্ডার হামিদুল্লাহ ১১ নং সেক্টরের সেক্টর কমান্ডার হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন।
মুক্তিযুদ্ধের ১১ টি সেক্টর ও সেক্টর কমান্ডারের নামঃ
সেক্টর নং | সেক্টরের বিবরণ | সেক্টর কমান্ডারের নাম |
১ | চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রাম হতে ফেনী নদী পর্যন্ত | মেজর জিয়াউর রহমান
ক্যাপ্টেন রফিকুল ইসলাম |
২ | নোয়াখালী, কুমিল্লা ফরিদপুর ও ঢাকার অংশবিশেষ | মেজর খালেদ মোশাররফ
মেজর এ.টি.এম. হায়দার |
৩ | সমগ্র সিলেট জেলা সেই সাথে হবিগঞ্জ ও কিশোরগঞ্জ মহকুমা। | মেজর কে এম শফিউল্লাহ
মেজর এ.এন.এম. নূরুজ্জামান |
৪ | সিলেট জেলার পূর্বাঞ্চল এবং খোয়াই-শায়েস্তাগঞ্জ রেললাইন বাদে পূর্ব ও উত্তর দিকে সিলেট-ডাউকি সড়ক পর্যন্ত | মেজর চিত্ত রঞ্জন দত্ত |
৫ | সিলেট-ডাউকি সড়ক থেকে সিলেট জেলার সমগ্র উত্তর ও পশ্চিমাঞ্চল | মেজর মীর শওকত আলী |
৬ | রংপুর, দিনাজপুর | উইং কমান্ডার মোহাম্মাদ খাদেমুল বাশার |
৭ | দিনাজপুরের দক্ষিণাঞ্চল, বগুড়া, রাজশাহী এবং পাবনা জেলা | মেজর নাজমুল হক, মেজর কাজী নুরজ্জামান |
৮ | সমগ্র কুষ্টিয়া, মাগুরা জেলা, ঝিনাইদহ জেলা ও যশোর জেলা, ফরিদপুরের অধিকাংশ এলাকা | মেজর আবু ওসমান চৌধুরী
মেজর এম. এ. মঞ্জুর |
৯ | খুলনার দক্ষিণাঞ্চল এবং সমগ্র বরিশাল ও পটুয়াখালী জেলা | মেজর এম এ জলিল, মেজর জয়নুল আবেদীন |
১০ | নৌ সেক্টর | কোন সেক্টর কমান্ডার ছিল না। মুক্তিযুদ্ধের একমাত্র নৌ সেক্টর। |
১১ | কিশোরগঞ্জ মহকুমা বাদে সমগ্র ময়মনসিংহ ও টাঙ্গাইল জেলা। | মেজর জিয়াউর রহমান
মেজর আবু তাহের স্কোয়াড্ৰণ লিডাৱ এম হামিদুল্লাহ খান |
সম্পর্কিত প্রশ্নাবলিঃ
প্রশ্নঃ মুক্তিযুদ্ধের সময় বাংলাদেশকে ১১ টি সেক্টরে ভাগ করেছিলেন কে?
মুক্তিযুদ্ধের প্রধান সেনাপতি জেনারেল এম এ জি ওসমানি।
প্রশ্নঃ মুক্তিযুদ্ধের ১০ নং সেক্টরের নাম কি?
নৌ সেক্টর।
প্রশ্নঃ মুক্তিযুদ্ধের সময় কয়টি জেলা ছিল?
১৯টি জেলা।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের ১ম ডিজিটাল শহর কোনটি?
সিলেট।
প্রশ্নঃ বাংলাদেশের ১ম ডিজিটাল জেলা কোনটি?
যশোর।
আরও পড়ুন: যুক্তফ্রন্ট কখন গঠিত হয় এবং এর আদ্যোপান্ত। মুক্তিযুদ্ধে জর্জ হ্যারিসনের অবদান। মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থীরা কোথায় এবং কিভাবে আশ্রয় পেয়েছিল। মুক্তিযুদ্ধে স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন পক্ষের ভূমিকা বিস্তারিত। মুক্তিযুদ্ধে সংগীত শিল্পীদের অবদান সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য দেখুন এই পোস্টে।