আসসালামু আলাইকুম, প্রিয় দর্শক আপনাকে স্বাগতম। পাহাড়পুর বাংলাদেশের নওগাঁ জেলায় অবস্থিত একটি গুরুত্বপূর্ণ ঐতিহাসিক প্রত্নতাত্ত্বিক ও দর্শনীয় স্থান। পাল রাজা ধর্মপাল দেব পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার টি নির্মান করেন। এর প্রকৃত নাম সোমপুর বিহার।
ভূমিকাঃ
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নওগা জেলার বদলগাছী থানায় অবস্থিত একটি প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন এবং একটি জনপ্রিয় দর্শনীয় স্থান। অষ্টম শতকে নির্মিত এই বিহারটি বৌদ্ধ জ্ঞান চর্চার তীর্থভূমি হিসেবে বিবেচিত ছিল। পাল বংশের শ্রেষ্ট রাজা ধর্মপাল এই বিহারটি নির্মান করেন। দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলো সহ তিব্বত, চীন, থাইল্যান, ইন্দোনেশিয়া হতে এখানে বৌদ্ধ ভিক্ষুরা জ্ঞানচর্চার জন্য আসত। ইউনেস্কো ১৯৮৫ সালে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারকে বিশ্ব
অবস্থান ও আয়তনঃ
এটি প্রাচীন পুন্ডুনগর ও কোটিবর্ষের মাঝামাঝি জায়গায় অবস্থিত। বর্তমানে এটি বাংলাদেশের রাজশাহী বিভাগের নওগাঁ জেলার বদলগাছি থানায় অবস্থিত। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারটি প্রায় ১০ হাজার বর্গ কিলোমিটার এলাকাজুড়ে বিস্তৃত। স্থানটি দেখতে কিছুটা পাহাড়ের মতো। স্থানীয় লোকজন এই জায়গাটিকে গোপাল চিতার ভিটা নামে আখ্যায়িত করে। তখন থেকে এর নাম পাহাড়পুর হয়। পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের প্রকৃত নাম সোমপুর বিহার।
পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহারের ইতিহাসঃ
পাল রাজবংশের দ্বিতীয় রাজা ধর্মপাল একজন মহান বৌদ্ধ এবং নিষ্ঠাবান শাসক ছিলেন। তার শাসনামলে বাংলা রাজ্যকে বিহার এবং পাকিস্তানের গান্ধার পর্যন্ত বর্ধিত করেন। ধর্মপাল বৌদ্ধ ধর্মের পৃষ্ঠপোষক ছিলেন। বৌদ্ধ ধর্মের শিক্ষা, ধর্মচর্চা, বৌদ্ধভিক্ষুদের জ্ঞানের ধারায় আরও শাণিত করতে পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহার, বিক্রমশিলা বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করেন। অতীশ দীপঙ্কর বিক্রমশীলা বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য ছিলেন। রাজা ধর্মপাল অষ্টম শতাব্দীর শেষ এবং নবম শতাব্দীর শুরুতে পাহাড়পুর বৌদ্ধবিহার নির্মাণ করেন।
আরও পড়ুন: মুজিবনগর সরকারের চারটি অবদান বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রামে সংগীত শিল্পীদের অবদান মহাস্থানগড় সম্পর্কে ১০ টি বাক্য ৫ জন বুদ্ধিজীবীর নাম। প্রাকৃতিক সম্পদ সংরক্ষণের ৫টি উপায় জাতীয় চার নেতার নাম ও পদবী মাদার তেরেসা সম্পর্কে ১০ টি বাক্য
আবিষ্কারের প্রেক্ষাপটঃ
পাল রাজাদের পর বাংলায় ক্ষমতায় আসেন সেনবংশ। লক্ষণ সেনের পলায়নে বাংলা তথা ভারতে মুসলিম শাসনের সূচনা ঘটে। মুসলিম শাসন বিশেষ করে মুঘল সাম্রাজ্যের পতনের পর বাংলা ও সমগ্র ভারতে ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হয়। পাহাড়পুর পাল শাসনামলে নির্মিত হয়ে পরবর্তী ৩০০ বছর চালু ছিল। ইংরেজ শাসন প্রতিষ্ঠিত হলে ইংরেজ প্রত্নতত্ত্ববিদ বুকানন হ্যামিলটন প্রথম সোমপুর বিহার সম্পর্কে জরিপ সম্পন্ন করেন। পরবর্তীতে আলেকজান্ডার কানিংহাম ১৮৭৯ সালে পাহাড়পুর প্রত্নতত্ত্ব স্থানটি সরেজমিনে পরিদর্শন করে খনন শুরু করেন। বলিহারের জমিদার খনন কাজে বাঁধা দিলে কানিংহাম কাজ অসমাপ্ত রেখে চলে যান। পরবর্তীতে ১৯০৪ খ্রিঃ এই পুরাতত্ত্বটি আবিষ্কার করা হয়।
স্থাপত্য নিদর্শন সমূহঃ
বিহারঃ
চারকোনাকার বিহারটির চতুর্দিকে দেয়াল ছিল। এখানে ৯২ কক্ষ ছিল যেগুলো ভিক্ষুদের জন্য। আর কিছু কক্ষ প্রাথনাকেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হত। প্রতিটি কক্ষে মজবুত দরজা লাগানো ছিল।
কেন্দ্রীয় মন্দির
বিহারের মাঝখানে একটি মন্দির ছিল। মন্দিরটি প্রায় ৩০ মিটার উুঁচু ছিল। মন্দিরের ভিতরে চারকোনাকার প্রকোষ্ঠ রয়েছে। এই প্রকোষ্ঠকে কেন্দ্র করে মন্দিরটি নির্মিত হয়েছে।
উন্মুক্ত অঙ্গনঃ
বিহারের মধ্যবর্তী স্থানে উন্মুক্ত অঙ্গন রয়েছেন। এর দক্ষিণ-পূর্ব কোনে ভোজনালয় রয়েছে।
স্নানাগার ও শৌচাগারঃ
স্নানাগার ও সৌচাগার গুলো বিহারের বাইরে অবস্থিত।
স্নানঘাটঃ
বিহারের দক্ষিন পূর্ব দিকে ৩.৫ মিটার প্রশস্ত স্নানঘাট রয়েছে। এই স্নানঘাটটি নদীর সাথে সংযুক্ত ছিল যাতে পানি কখনো শুকিয়ে না যায়।
গন্ধেশ্বরী মন্দিরঃ
স্নানঘাট হতে ১২ মিটার পশ্চিমে গন্ধেশ্বরী মন্দির রয়েছে। এর দৈর্ঘ ৬.৭মিটার এবং প্রস্থ ৩.৫মিটার। এর দেয়ালে বিভিন্ন রকম মুসলিম ঘরানার নঁকশা ও কারুকার্য করা আছে।
সত্যপীরের ভিটাঃ
পাহাড়পুর বৌদ্ধ বিহারের ৩০০ গজ পূর্বে সত্যপীরের ভিটা রয়েছে। সত্যপীর নামক স্থানীয় এক লোকের নামানুসারে এর নামকরন করা হয় “সত্যপীরের ভিটা”।
আরও পড়ুন: অপারেশন সার্চলাইট এর নীল নকশা কে তৈরি করেন। অপারেশন সার্চলাইট সম্পর্কে বিস্তারিত। অপারেশন সার্চলাইটের নৃশংস হত্যাকান্ডের খবর বিশ্বে কীভাবে ছড়িয়েছিল। সাইমন ড্রিং এর মুক্তিযুদ্ধে অবদান যুক্তফ্রন্ট কেন গঠিত হয়েছিল মুক্তিযুদ্ধে জর্জ হ্যারিসনের অবদান। মুক্তিযুদ্ধের সময় শরণার্থীরা কোথায় এবং কিভাবে আশ্রয় পেয়েছিল।