ইসলাম ( ۘالِإسْلَام)ঃ
পৃথিবীতে যতগুলো ধর্ম আছ তার মধ্যে ইসলাম হচ্ছে সবচেয়ে আধুনিক, প্রগতিশীল ও সাম্যবাদী একেশ্বরবাদী ধর্ম। ইসলাম বর্তমানে বিশ্বের ২য় বৃহত্তম এবং বর্তমানে সবচেয়ে দ্রুত বর্ধনলীল ধর্ম। ইসলাম ধর্মে আল্লাহ হচ্ছে সমগ্র বিশ্বের স্রষ্টা, পালনকর্তা, রিজিকদাতা। আল্লাহ এক ও অদ্বিতীয়, তার কোন শরীক নেই। এক আল্লাহ ব্যতিত অন্য কোন উপাস্য নেই। হযরত মুহাম্মদ সাঃ আল্লাহর প্রেরিত সর্বশেষ নবী ও রাসুল। ইসলাম ধর্মের প্রধান ধর্মগ্রন্থ হলো আল-কোরআন যা স্বয়ং আল্লাহর বানী। এই মহাগ্রন্থ সর্বশেষ নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর ওপর অবতীর্ণ হয়। ইসলাম ধর্মের সকল বিধি-বিধান আল্লাহ এই গ্রন্থে লিপিবদ্ধ করে দিয়েছেন। আর সর্বশেষ ও সর্বশ্রেষ্ঠ নবী হযরত মুহাম্মদ সাঃ এর বাণী, কাজ ও মৌনসম্মতিকে সুন্নাহ বা হাদীস বলা হয়। এই কোরআন ও সুন্নাহ হচ্ছে ইসলামের পূর্ণাঙ্গ গাইডলাইন রয়েছে। ন্যায়-অন্যায়, হালাল-হারাম, আদেশ-নিষেধ, কোনটি ক্ষতিকর আর কোনটি উপকার তা এই কোরআন ও হাদীসের মাধ্যেমে মানবজাতীকে সূচারুরূপে ব্যাখ্যাসহ বুঝিয়ে দেয়া হয়েছে। কোরআন ও সু্ন্নাহকে অনুসরনের মাধ্যমে পরিপূর্ণ মুমিন হওয়া সম্ভব।
“ইসলাম ’’ আরবি ভাষায় “ إسلام” যার বাংলা শাব্দিক অর্থ শান্তি। ধর্মীয় অর্থে ইসলাম হচ্ছে নিজেকে আল্লাহর কাছে সম্পূর্ণভাবে আত্মসমর্পন করাকে বুঝায়। ইসলাম ধর্মের অনুসারীকে মুসলিম (مسلم) বলা হয়। মুসলিম শব্দের সাথে ফারসি “ان” (আন) প্রত্যয় যুক্ত করে মুসলমান (مسلمان) শব্দটি গঠিত হয়েছে। মুসলিম বা মুসলমানদের ধর্মীয় বিশ্বাসের মূল ভিত্তি হচ্ছে আল্লাহর একত্ববাদ।
সাইমন ড্রিং এর মুক্তিযুদ্ধে অবদান
ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো কি কিঃ
ইসলামের কিছু মৌলিক বিষয় রয়েছে। এই বিষয়গুলো বিশ্বাস করা ও আমল করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয। এগুলোর যেকোন একটিকে অস্বীকার করলে সে কাফের হয়ে যাবে। ইসলামের মৌলিক বিষয় হচ্ছে পাঁচটি। ইসলামের এই পাঁচটি মৌলিক বিষয়ক ইসলামের পঞ্চস্তম্ভ বলা হয়। ইসলামের এই মৌলিক বিষয়গুলো মেনে চলা ফরয ও ঈমানি দায়িত্ব।
এ প্রসঙ্গে ওমর ইবনে খাত্তাব বলেন, রাসুল সাঃ বলেন ইসলামের স্তম্ভ হচ্ছে পাঁচটি। এগুলো হলো এক আল্লাহ ব্যতীত আর কোন মাবুদ নাই এবং হযরত মুহাম্মাদ সাঃ আল্লাহর প্রেরিত রাসূল এই কথার স্বাক্ষ্য প্রদান করা, সালাত আদায় করা, রোজা রাখা, যাকাত প্রদান করা, হজ্জ্ব পালন করা।
অর্থাৎ ইসলামের মৌলিক বিষয়গুলো হলো কালেমা, নামায, রোজা, হজ্জ্ব ও যাকাত।
কালেমাঃ
কালেমা শাহাদত হলো.-
উচ্চারণ: আশহাদু আল লা-ইলাহা ইল্লাল্লাহু ওয়াদাহু লা-শারীকালাহু ওয়া আশহাদু আন্না মুহাম্মাদান আবদুহু ওয়া রাসুলুহু।
অর্থঃ আমি সাক্ষ্য দিচ্ছি যে, আল্লাহ ছাড়া আর কোন মাবুদ বা উপাস্য নাই, তিনি এক ও অদ্বিতীয়। তার কোন শরীক নাই। এবং আমি আরও স্বাক্ষ্য দিচ্ছি যে, হযরত মুহাম্মদ (সাঃ) আল্লাহর প্রেরিত সর্বশ্রেষ্ঠ বান্দা এবং নবী ও রাসুল।
প্রতিটি মুসলমানের এই কালেমা মুখে উচ্চারন করা, অন্তরে বিশ্বাস স্থাপন করা এবং সেই অনুযায়ী কাজ করা ঈমানি দায়িত্ব ও ফরয। যদি কেউ এই কালেমা মানতে অস্বীকার করে তাহলে তার ঈমান থাকবে না।
নামাযঃ
ঈমানের পর ইসলামের দ্বিতীয় এবং গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভ হলো নামায। প্রতিদিন ৫ (পাঁচ) ওয়াক্ত সালাত আদায় করা প্রত্যেক মুসলমানের জন্য ফরয। রাসুলুল্লাহ সাঃ কে সালাত প্রতিষ্ঠার জন্য আল্লাহ বার বার তাগিদ দিয়েছেন। কোরআনের বিভিন্ন জায়গায় ৮২ বার সালাতের কথা উল্লেখ করেছেন।
হযরত আব্দুল্লাহ ইবনে মাসউদ হতে বর্ণিত, তিনি বলেন, আমি রাসুলুল্লাহ সাঃ এর কাছে জানতে চাইলাম, হে আল্লাহর রাসুল, আল্লাহর কাছে সবচেয়ে বেশি প্রিয় আমল কোনটি? রাসুলুল্লাহ সাঃ এর উত্তরে বললেন, নামায। (সহীহ বুখারী ও মুসলিম)।
নামায বা সালাত ইসলামের একটি দৈনিক ইবাদত। প্রাপ্তবয়স্ক এবং বুদ্ধি-বিবেক সম্পন্ন প্রতিটি মুসলিম নর-নারীর জন্য সালাত আদায় করা ফরজ। নামায ফরজ হওয়ার পর তাকে অবশ্যই সালাত আদাক করতে হবে।
নামায ফরজ হওয়ার আবশ্যকীয় শর্তগুলো হলো
১। মুসলিম হওয়া।
২। সাবালক হওয়া।
৩। বুদ্ধি-বিবেক সম্পন্ন হওয়া।
প্রতিদিনি একজন মুসলিমকে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করতে হয়।
ফজরঃ
প্রথম হচ্ছে ফজরের নামায। সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত ফজরের নামাযের সময়। ফজরের নামাজ মোট চার রাকাত। দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত ফরজ।
যোহরঃ
দুপুরের সূর্য পশ্চিম আকাশে হেলে পড়লেই যোহরের ওয়াক্ত শুরু হয়। ছায়া আসলি বাদে কোন বস্তুর ছায়া দ্বিগুন হওয়া পর্যন্ত যোহরের ওয়াক্ত বিদ্যমান থাকে। যোহরের নামায মোট ১২ রাকাত। প্রথমে চার রাকাত সুন্নত আদায় করতে হয়। তারপর ইমামের নেতৃত্বে চার রাকাত ফরজ আদায় করে নিতে হয়। ফরজ নামাযের পর পর্যায়ক্রমে দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত নফল নামায আদায় করতে হয়।
আসরঃ
সূর্য পশ্চিমে হেলে পড়ে বস্তুর ছায়া দ্বিগুন হলে আসরের ওয়াক্ত শুরু হয় এবং সূর্যাস্তের আগ পর্যন্ত আসর এর ওয়াক্ত থাকে। আসরের নামায চার রাকাত সুন্নত ও চার রাকাত ফরজ।
মাগরিবঃ
সূযাস্তের পর মাগরিবের নামায আদায় করা হয়। মাগরিবের নামায মোট সাত রাকাত। তিন রাকাত ফরজ, দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত নফল।
এশাঃ
মাগরিবের সময় অতিবাহিত হওয়ার পর এশার নামায শুরু হয় এবং রাতের তিন ভাগের এক হওয়ার পূর্ব পর্যন্ত এশার নামায পড়া যায়। এশার নামাযে চার রাকাত ফরজ, ফরজ নামাযের পূর্বে চার রাকাত সুন্নত। ফরজ পড়ার পর দুই রাকাত সুন্নত ও দুই রাকাত নফল। এবং শেষে তিন রাকাত বিতরের সালাত আদায় করতে হয়। বিতরের সালাত রাতের যে কোন সময় আদায় করা যায়।
নামাযের গুরুত্ব সম্পর্কে রাসুল সাঃ বলেন, মুসলিম ও কাফেরের মধ্যে পার্থক্য নিরূপনকারী হলো নামায। (সহীহ মুসলিম ৮২, মিশকাত ৫৬৮)
রাসুলুল্লাহ সাঃ বলেন, যে ব্যক্তি উত্তম রূপে পাঁচ ওয়াক্ত সালাত আদায় করবে আল্লাহ তাকে পাঁচটি পুরস্কারে সম্মানিত করবেন।
(১) তার রিজিকের ব্যবস্থা করে দিবেন।
(২) কবরের আযাব হতে মুক্তি দেবেন।
(৩) আমল নামা ডান হাতে দেবেন।
(৪) বিজলীর ন্যায় পুলসিরাত পার করাবেন ও
(৫) বিনা হিসেবে জান্নাতে প্রবেশ করাবেন।
মুক্তিযুদ্ধের সেক্টর কয়টি ও কি কি
রোজা
সুবহে সাদিক হতে সূর্যাস্ত পর্যন্ত সকল প্রকার পানাহার, কামাচার, পাপাচার এবং সেই সাথে সকল প্রকার ভোগ বিলাস হতে বিরত থাকার নাম রোজা। ইসলামি বিধান অনুসারে রমজান মাসে রোজা রাখা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর জন্য ফরজ।
আবু হুরাইরা হতে বর্নিত, রাসুল সাঃ বলেন, ঈমানের সাথে সওয়াবের আশায় যে ব্যক্তি রোজা রাখে আল্লাহ তার পূর্ববর্তী সকল গুনাহ মাফ করে দেন।
কোরআনে বলা হয়েছে, প্রত্যেক মুমিনের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে যেমনটি ফরজ করা হয়েছিল পূর্ববর্তীদের ওপর যাতে তোমরা তাকওয়া তাকওয়া অবলম্বন করতে পারো। সূরা বাকারা, আয়াত ১৮৩
রোজার ফরজঃ
১। নিয়ত করা।
২। সব ধরনের পানাহার থেকে বিরত থাকা।
২। যৌনাচার থেকে বিরত থাকা।
রোজা রাখার শর্তঃ
১। মুসলিম হওয়া।
২। বালেগ হওয়া।
৩। অক্ষম না হওয়া।
৪। ঋতুস্রাব থেকে বিরত থাকা নারী।
যাকাত (الزكاة) ঃ
যাকাত আরবি শব্দ যার অর্থ পবিত্র করা, বৃদ্ধি পাওয়া, বরকত হওয়া, পরিশুদ্ধকরন ইত্যাদি। ইসলামের পরিভাষায় কোন মুসলিমের নিসাব পরিমাণ সম্পদ থাকলে প্রতি বছর তার সম্পত্তির ২.৫% হারে ইসলামের নির্দিষ্ট খাতে ব্যয় করাকে যাকাত বলে।
এখানে নিসাব পরিমাণ বলতে নির্দিষ্ট অর্থ বছর শেষে যদি কারও সাড়ে সাত ভরি স্বর্ণ কিংবা সাড়ে বায়ান্ন তোলা রৌপ্য কিংবা তার সমপরিমাণ অর্থ সম্পদ বোঝায়।
ইসলামের পাঁচটি মৌলিক স্তম্ভের মধ্যে যাকাত অন্যতম। গুরুত্বের দিক থেকে এটির স্থান নামাযের পরেই। আর্থিক ইবাদতের ক্ষেত্রে যাকাতের কোন বিকল্প নাই। যাকাত ইসলামী অর্থ-ব্যবস্থার মেরূদণ্ড হিসেবে বিবেচিত।
জমির ফসলের যাকাতের বিধান হচ্ছে প্রাকৃতিক ভাবে উৎপন্ন ফসলের দশ ভাগের একভাগ এবং কৃত্রিম সেচের মাধ্যমে উৎপন্ন ফসলের বিশ ভাগের এক ভাগ যাকাত দিতে হয়।
যাকাতের শর্থঃ
মুসলিম নর-নারীর কাছে নির্দিষ্ট পরিমাণ সম্পদ থাকলে কতিপয় শর্ত সাপেক্ষে তার ওপর যাকাত ফরজ।
১। সম্পদের পূর্ণ মালিকানা থাকা।
২। সম্পদ উৎপাদক্ষম হওয়া।
৩। নিসাব পরিমাণ সম্পদ।
৪। মৌলিক প্রয়োজনাতিরিক্ত সম্পদ।
৫। ঋণমুক্ততা।
৬। সম্পদ এক বছর আয়ত্ত্বাধীন থাকা।
যাকাত বন্টনের খাতসমূহঃ
যাকাতে খাত বা মাসারিফ ৮টি।
১। ফকির
২। মিসকিন
৩। মুসাফির
৪। যাকাত আদায়ে নিযুক্ত কর্মচারী।
৫। নওমুসলিম।
৫। ক্রীতদাস হতে মুক্তির জন্য।
৬। ঋনগ্রস্ত ব্যক্তি।
৭। ইসলামের প্রতি আকৃষ্ট করার জন্য কোন অমুসলিমকে যাকাত প্রদান করা
৮। আল্লাহর রাস্তায়
হজ্জঃ
হজ্জ মুসলমানদের জন্য একটি বাধ্যতামূলক ইবাদত। শারীরিক ও আর্থিকভাবে সক্ষম সকল মুসলমানদের জন্য জীবনে একবার হজ্জ পালন করা ফরজ। আরবি যিলহজ্জ মাসের ৮ তারিখ থেকে ১২ তারিখ হজ্জের সময়।
হজ্জের ফরজ তিনটিঃ
১। ইহরাম বাধা।
২। আরাফার ময়দানে অবস্থান করা।
৩। তাওয়াফ করা।
হজ্জের ওয়াজিব ছয়টিঃ
১। সাফা ও মারওয়া পাহাড়ের মধ্যে ৭ বার দৌড়ানো। এক সাঈ করা বলে। দৌড় শুরু হবে সাফা থেকে এবং শেষ হবে মারওয়া তে গিয়ে।
২। জিলহজ্জের ১০ তারিখ যে কোন সময় মুজদালিফায় অবস্থান করা।
৩। শয়তানকে পাথর নিক্ষেপ করা।
৪। তামাত্তু ও কিরান হজ্জকারীদের দমে শোকর বা হজ্জের কোরবানি করা।
৫। হারাম শরীফের সীমানায় কুরবানির দিনগুলোতে মাথার চুল ছোট করা।
৬। বিদায়ী তাওয়াফ করা।
হজ্জের তালাবিয়াঃ
পুরষরা উচ্চস্বরে হজ্জের তালাবিয়া উচ্চারন করবে, হজ্জের তালাবিয়া হচ্ছে, “লাব্বাইক আল্লাহুম্মা লাব্বাইক, লাব্বাইকা, লা-শারিকা-লাকা লাব্বাইক, ইন্নাল হামদা ওয়ানি মাতা লাকা ওয়াল মুলক, লা শারিকালাক।
ইসলামের এই পাচটি মৌলিক বিষয় যা পঞ্চস্তম্ভ হিসেবে পরিচিত । এই মৌলিক বিষয়গুলো আমাদের মেনে চলা উচিত।